পানির নিচে কক্সবাজার পাহাড়ধসে নিহত ২

10

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ধসের মাটিচাপায় নিহত হয়েছেন ২ নারী-শিশু। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাত তিনটা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ভারী বর্ষণে পুরো পর্যটন শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতেও। নিহতরা হলেন শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এবিসি ঘোনার দক্ষিণ পল্লানিয়াকাটা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা বেগম (৩০) ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকার সাইফুলের ছেলে নাজমুল হাসান (৬)।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান স্থানীয়দের বরাতে জানান, বুধবার (১০ জুলাই) রাতে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তবে রাত ৩টা থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। প্রায় ৪ ঘণ্টা চলে এ বৃষ্টি। টানা বর্ষণে পর্যটন জোনসহ পৌরসভার প্রায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনাও। সকাল ৭ টার দিকে মাঝারি আকারে রূপ নেয় বৃষ্টি।
নিহত জমিলার স্বামী করিমের বরাতে স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর বলেন, দক্ষিণ পল্লানিয়াকাটায় বসতঘরে সবাই নাস্তার আয়োজন করছিলেন। এ সময় আচমকা পাহাড়ের মাটি ধসে বসত ঘরে পড়লে এতে চাপা পড়েন গৃহবধূ জমিলা। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, সিকদার বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে ঘরের মাটির দেয়ালসহ আসবাবপত্র শিশু হাসানের গায়ে পড়ে। তাকে দ্রæত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মুহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, মাটিচাপায় জখম হওয়া দু’জনের মধ্যে শিশু নাজমুলকে সকাল পৌঁনে আটটা ও নারী জমিলাকে পৌঁনে ৯ টায় হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তারা মারা যান। দেয়াল চাপায় শিশু নাজমুলের মাথা থেঁতলে যায়। লাশগুলো মর্গে রয়েছে বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ চলছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোর রাত তিনটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৮৫ মিমি আর ছয়টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৯৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পর্যটন জোনের ব্যবসায়ী ওবায়দুল হোসেন ও মুহাম্মদ আয়াছ জানান, কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে কলাতলীর পর্যটন জোনের প্রধান সড়কসহ উপ-সড়কগুলো হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। পানি ঢুকেছে অনেক দোকান, অফিস ও বাসায়।
টেকপাড়ার বাসিন্দা জুনিয়র হান্নান জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরো টেকপাড়া, চাউলবাজার, বড় বাজার, পেশকারপাড়ার আশপাশ তলিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ওপরে হাঁটু পরিমাণ পানি। এছাড়া শহরের প্রধান সড়কও তলিয়েছে। নালার ওপর স্থাপনা করায় পানি চলাচল পথ সংকোচিত হয়ে নিষ্কাশনে বাধা পেয়ে পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। এতে দামি আসবাবসহ বাড়ির সব কিছু পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা।
পানিবন্দি হয়ে আছে কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের অধিকাংশ এলাকা। বিশেষ করে কলাতলী মোড়, লাইটহাউজ, সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাসাবাড়ির লোকজনও পানি বন্দী হয়ে পড়েন।
কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আলমগীর জানান, পাহাড় ধসে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির তোড়ে শহর ফাঁড়ি ভবনের নিচতলাও তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে অফিসকক্ষসহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতেও। ডুবেছে রাস্তাঘাট। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।