পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এক মহাবিজয়

4

এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় আবেগের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট লড়াই হতে পারে তবে তা এতোটুকু আকর্ষণীয় হওয়ার নয় যে, বাংলাদেশের মত একটি দেশ পাকিস্তানের মাঠে পাকিস্তানকে পরাভুত করবে! ভারত এখানে মানানসই, উদ্দীপনার এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সবসময়। ছোটকাল থেকে দেখে আসা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট লড়াই মানে একেকটি বিশ্বযুদ্ধ! সেই জায়গায় বাংলাদেশ! তাও আবার টেস্ট ক্রিকেটে! অতি আশ্চর্যের এ সত্যের রচয়িতার নাম বাংলার বাঘ; টিম টাইগার। সাবাশ বাংলাদেশ। অভিনন্দন, অভিনন্দন। অভাবনীয় বিজয়ের এ ধারা অব্যাহত থাক। আগামীর বাংলাদেশে ক্রিকেট হয়ে উঠুক সাংস্কৃতিক-কূটনৈতিকের এক বলিষ্ঠ বাহক। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল একটি আবেগ ও অনুভূতির জায়গা। বহুদিনের হতাশা আর ব্যর্থতার গ্লানি মুছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন ইতিহাস। দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অর্জনের গল্প। আশার আলো দেখাচ্ছে শান্তদের গর্জন, বেটে বলের আলোকরশ্মি। যেখানে পত পত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। আসল কথা হচ্ছে, বিশ্ব কিক্রেটের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে তাদের হারিয়ে এ বিজয় অর্জন করল টিম টাইগার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দুর্বিষহ এক অধ্যায় পেরিয়ে এমন আলোর দেখা পাওয়ায় এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। দেশের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষ তাদেও অভিনন্দিত করছেন। ফেসবুকসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে প্রশংসার বন্য বইছে। এদিকে দেশের বন্যার্তদের জন্য মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস পুরস্কার হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসায় সাধারণ মানুষ তাদের আরও বেশি ভালোবাসার জায়গায় আসন দিয়েছে। এজন্য বিশ্বকাপসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে শুধু টেস্ট নয়; ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা এদেশের প্রত্যেক ক্রিকেটভক্তের হৃদয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সামনের সব ম্যাচেই জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে দারুণ প্রস্তুতি নেবে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার মতো প্রতিটি পদক্ষেপে নিখুঁত সিদ্ধান্তে এমন অবিশ্বাস্য সাফল্যের দেখা মিলবে- এ আমাদের কোটি হৃদয়ের প্রত্যাশা। টেস্ট আঙিনায় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে অনেক আগে দেখা গেলেও; দেখতে দেখতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পথচলাও কম দিনের নয়। দশম টেস্টখেলুড়ে দেশ হিসেবে ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে ঢাকায় প্রথম টেস্ট খেলে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর ২৪ বছরে দিনে দিনে বহু অর্জনের সাক্ষী হয়েছে এদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। তবে বেশ কিছুদিন তাদের দক্ষতায় ঘাটতি থাকা, চর্চার অভাব আর ভালো ভালো ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে না পারার হতাশা নিয়ে দিন কাটছিল টাইগার বাহিনীর। কিন্তু সবশেষ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) পাকিস্তান জাতীয় দলের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে ২ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জয় পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দেশের বাইরে তৃতীয় টেস্ট সিরিজ জয় বাংলাদেশের। আমরা দেখেছি, তাদের এই অবিস্মরণীয় জয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফোন দিয়ে টাইগার বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিও অভিনন্দন জানিয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, টেস্টে আরেকটি অনন্য রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা। বাংলাদেশই টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দল যারা প্রথম ইনিংসে ২৬ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পরও টেস্ট জিতেছে।
এ জন্য দেশের খেলোয়াড়দের রাজনীতি কিংবা ব্যবসার দিকে ধাবিত না হয়ে শুধু খেলোয়াড় হয়ে ওঠা দরকার। যাদের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-জ্ঞান থাকবে ক্রিকেটকেন্দ্রিক। কীভাবে বাংলাদেশকে ক্রিকেটের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা যায় এমন স্বপ্ন যেন তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এরই মধ্যে এক যুগ পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার দায়িত্ব ছেড়েছেন। বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফারুক আহমেদ। যিনি এর আগে দুবার প্রধান নির্বাচক ছিলেন। এই ফারুক আহমেদের প্রথম মেয়াদেই সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের মতো তারকাদের পথচলা শুরু হয়েছিল। যাদের হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আজ হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করেছে। তাই আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আবার ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন নতুন ইতিহাস রচনা করবে আর এদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। এ ক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনা এবং টিম ম্যানেজম্যান্টের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা আশা করি, নতুন সরকারের নতুন ক্রিকেট বোর্ড স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করলে বিশ্ব ক্রিকেট বাংলাদেশের আয়ত্তে চলে আসবে।