পাঁচ মূল সমস্যার কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা

9

পণ্য খালাসে বন্দরের জটিলতা দূর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হয়রানি বন্ধ, ব্যাংক থেকে সহজে ঋণপ্রাপ্তি ও নির্বিঘ্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। গত রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তারা এসব দাবি জানান।
বৈঠকে ফরেন চেম্বার অব কমার্সের (ফিকি) পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্প্রতি ছাত্রদের আন্দোলন ঘিরে অচলাবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছে। বিজিএমইএ থেকে বলা হয়েছে, পোশাক খাতে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। অন্য কয়েকটি সংগঠন তাদের খাতের ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে।
সভায় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, রিহ্যাব, বেসিস, ই-ক্যাবসহ বেশ কয়েকটি খাতের শীর্ষ নেতা ও এবং শিল্প গ্রুপের প্রধানরা।
সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা সাম্প্রতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন এবং সরকারকে সব রকমের সহায়তা করবেন। তিনি জানান, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা কিছু সমস্যার কথা বলেছিলেন। সেগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। সে জন্যই এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে ব্যবসায়ী নেতারা পাঁচটি মূল সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের বেশি সমস্যা চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক। পাঁচ-ছয় দিন পণ্য খালাস করা সম্ভব হয়নি। ফলে সেখানে পণ্যের জট লেগে যায়। তাই বিলম্ব ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে বন্দর ও জাহাজ-সংশ্লিষ্ট অংশীজন এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ব্যাংক ঋণ দিতে চাইছে না। ঋণের সুদ বেশি। তা ছাড়া সা¤প্রতিক আন্দোলনের কারণে ক্ষতির কথা বলে ঋণের সুদ মওকুফ এবং ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আন্দোলনের ঘটনায় বর্তমানে একটা সংকটময় পরিস্থিতি চলছে। এটা স্বীকার করতে হবে যে, এ কারণে দেশের একটা ভাবমূর্তি সংকট তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রায় একই মতামত দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ঘটনার কারণে গত সপ্তাহে দেশ-বিদেশে যতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাতে বোঝা গেছে, দেশের জন্য বড় ধরনের ভাবমূর্তি সংকট তৈরি হয়েছে। এর উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। কাউকে দোষারোপ করে সমস্যার সমাধান হবে না। এখন একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এটা দেশের অভ্যন্তরে নয়, বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, এই ঘটনা এখন দেশের সবার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান এখনও তৈরি হয়নি। সব খাতের তথ্য নেওয়া হবে। দু’এক দিনের মধ্যেই তা উপস্থাপন করা হবে সরকারের কাছে।