পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হিসেবে নারীকে তৈরি করতে হবে

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের মেয়েদের কেবল ভুক্তভোগী হিসেবে না দেখে তাদের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে।
গতকাল বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘আইসিপিডি থার্টি গেøাব্যাল ডায়ালগ অন ডেমোগ্রাফিক ডাইভার্সিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতায় এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, বাল্য বিবাহ, যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। ২০১৪ সালে লন্ডন গার্লস সামিটে আমি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
বাল্যবিবাহ আইন সংশোধন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে বাল্যবিবাহের হার বহুলাংশে কমেছে। আমরা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি’ গড়ে তুলেছি।শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে ৮ হাজারের বেশি কিশোর-কিশোরী ক্লাব করা হয়েছে। ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এক কোটি নারীকে তথ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্প লাইন ‘১০৯’ চালুর মাধ্যমে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতিটি থানায় নারী পুলিশের দায়িত্বে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সাপোর্ট ডেস্ক খোলা হয়েছে।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ লাখ কিশোরীকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে আমরা দেশব্যাপী ‘স্কুল মিল’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।
বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, উপবৃত্তি, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করার মত উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তির ৪২.৬ শতাংশ নারী। এই হার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
আইসিটি খাতের কর্মী বাহিনীতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কার্যক্রম নেওয়ার কথাও তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবালজেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং এ অঞ্চলে প্রথম। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ আগের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ৩৮.২৪ শতাংশ বেশি ছিল।
আমাদের সরকারের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপের সুফল হিসেবে ২০২৩ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২.৩ বছর। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৯.২৯ শতাংশের বয়স ষাটের বেশি। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের জনগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনগোষ্ঠীতে পরিণত করার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ৭২ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেন। তার নিদের্শে ৭৩-৭৮ সালে পর্যন্ত প্রথম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় জনসংখ্যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা সরকারে ছিলাম না। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর সেসব অসমাপ্ত কাজ আবার শুরু করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর আমরা আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনের ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণয়ন করি।
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র/পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক থেকে মা, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
২০১০ সালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমি ৩০ হাজার ধাত্রী নিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২০ হাজার ধাত্রী নিয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি।