‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কাগজে-কলমে

5

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশের পর তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে তার বাস্তবায়ন নেই। হেলমেট ছাড়াই নগরীর ফিলিং স্টেশনে মিলছে পেট্রোল, অকটেন।
শুধু ফিলিং স্টেশন বা পাম্পেই নয় সড়কের পাশে এবং মহাসড়কে খোলা বাজারে মিলছে বোতলজাত এসব জ্বালানি তেল। ব্যবসায়ী ও মোটরসাইকেল চালকরা অনেকেই জানে না এমন কোন নির্দেশনা, তাই হেলমেট ছাড়াই তেল নিতে আসেন। গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশন ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
দুর্ঘটনা ঠেকাতে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নগরীর বেশির ভাগ পাম্পে মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট না থাকলেও জ্বালানি দেওয়া হচ্ছে।
পাম্প মালিকরা বলছেন, তারা নির্দেশনার বিষয়টি শুনলেও এ-সংক্রান্ত সরকারি, বেসরকারি বা মালিক সমিতির কাছ থেকে লিখিত নোটিশ পাননি।
সরেজমিন তথ্য নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে পেট্রোল পাম্প রয়েছে ২৫টি। এছাড়াও ছোট সড়ক এবং মহাসড়কের পাশে রয়েছে ব্যাঙের ছাতার মত অগণিত বোতল জাত করে পেট্রোল, অকটেন বিক্রি করার দোকান। এসব বিক্রেতারা জানেই না ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ এর মানে কি? আবার এখানে তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল চালকরাও জানেন না এর মানে।
বহদ্দারহাট টার্মিনাল এলাকার খুইল্যা মিয়া পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের কাছে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য পাম্পেও একই চিত্র দেখা গেছে।
কর্মচারীরা বলছেন, আমরা শুনেছি এ রকম একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লিখিত নির্দেশনা আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। তারপরও মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরে তেল নিতে আসতে বলছি। এ নিয়ে বেশির ভাগ ক্রেতার সঙ্গে বাগবিতন্ডা হচ্ছে।
নগরীর বালুচরা বিআরটিসি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. জমির উদ্দিন বলেন, আমি এ নির্দেশনা সম্পর্কে শুনেছি। তবে লিখিত কোনো নির্দেশনা আমাদের হাতে আসেনি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে কি করতে হবে, তা স্পষ্ট নই।’
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার জ্বালানি তেল বিক্রি করা এক ব্যবসায়ী জানান, আমরা ড্রামে করে পেট্রোল ও অকটেন আনি কোনদিন দুই ড্রাম বিক্রি হয়, আবার কোন দিন এক ড্রামও বিক্রি হয়।
‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার তো কত নিয়মই বানায় সব কি কার্যকর হয়? ধরেন অনেকের কাছে টাকা কম তিনি অল্প পেট্রোল তার গাড়িতে ভরবেন যেটা পাম্পে গেলে সাধারণত দিতে চায় না, তারা আমাদের কাছে আসে, আবার দেখা যায় অনেক পাম্পে তেলে পানি থাকে আমাদের এখানে সেটা থাকে না বলে সেই সব মোটরসাইকেল চালকরা আমাদের এখান থেকে তেল নেয়। তবে শেষ দিকে তিনি ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান এবং বলেন, শুধু মুখে আর ব্যানারে না দিয়ে কাজেও দেখাতে হবে প্রশাসনকে।
মোটরসাইকেলে তেল নিতে আসা শাকিল হায়দার সাইমুন জানান, আমি জানি না ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ এর অর্থ। সব সময়ই তো তেল নিতে আসি কখনও এমনটা শুনি নাই যদি শুনতাম তাহলে হেলমেট নিয়ে আসতাম।
হেলমেট ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমের কারণে হেলমেট ব্যবহার করছি না। তবে পরবর্তীতে হেলমেট নিয়ে আসবো।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্ট এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা তেল কোম্পানিগুলো থেকে এ নির্দেশনা পেয়েছি। তবে এখনও সকল পাম্পের মালিকদের বলতে পারিনি। দু-একদিনের মধ্যে সকলকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এন.এম নাসিরুদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, মোটরসাইকেলে চালকসহ দুজনের বেশি বহন ও হেলমেটবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আমি নিজে মূল সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি, পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এটা আগে থেকেও নির্দেশনা ছিল, ভবিষ্যতেও এ জোরদার করা হবে। হেলমেট ছাড়া কোনো মোটরসাইকেল চালককে জ্বালানি তেল না দিতে আমরা পাম্প কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিবো।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, ‘হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত আছে। এখন আমরা সবগুলো ফিলিং স্টেশনকে অবহিত করবো এবং সংশ্লিষ্ট নোটিশটি প্রত্যেক পেট্রোল পাম্পের দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা দিবো।’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিএ সংস্থাপন শাখা থেকে উপসচিব মো. মনিরুল আলম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়- ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭ এর ধারা ১০ এর অধীন গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালক এবং তার সহযাত্রীকে আবশ্যিকভাবে বিএসটিআই কর্তৃক নির্ধারিত মানের হেলমেট পরিধান করতে হবে। কোন মোটরসাইকেল চালক ও সহযাত্রী হেলমেট ব্যবহার না করলে উক্ত মোটরসাইকেলে কোন প্রকার জ্বালানি সরবরাহ করা যাবে না। এই প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ১২৪ এর ক্ষমতাবলে মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীদের জন্য ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ নির্দেশনা জারি করা হলো। মোটরসাইকেলের চালক/রিফুয়েলিং স্টেশনের মালিকগণ এই নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। অন্যথায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৯২(১) ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
এর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ হেলমেট ছাড়া জ্বালানি দেওয়া হবে না। গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলাম পুলিশ সদর দপ্তরের অনুষ্ঠিত এপ্রিল মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এই নির্দেশনা দেন।