নেতৃত্বে নতুন মুখ চান ব্যবসায়ীরা

8

ফারুক আবদুল্লাহ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সারাদেশে এখন একটা সংস্কার চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হওয়া চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি কাপড়ের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র টেরিবাজারে সংস্কারের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য এবারের নির্বাচনে নেতৃত্বে নতুন মুখ দেখতে চান তারা।
এদিকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির ১১তম দ্বি-বার্ষিক (২০২৪-২০২৬) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতি পদে কোন প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় মোট ২১টি পদের মধ্যে ২০ পদে নির্বাচন হবে। সভাপতি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল মান্নান। গত নির্বাচনে তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তবে এর আগে চার বার টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এবার সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে একজন হলেন, সদ্যবিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন। অন্যজন আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মো. আবুল মনসুর।
সভাপতি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯৯১ সালে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকে আমি এবারসহ মোট ১০ বার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করি। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে চার বার এবং সহ সাধারণ সম্পাদক পদে দুইবার সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময়ে অন্যয়ভাবে কোন ব্যবসায়ী কিংবা সমিতির মান ক্ষুণœ হয়, এমন কাজ করেছি বলে আমার জানা নেই। এজন্য আমি একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী হয়েও আমার ৯৫ শতাংশ ভোটার সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এলাকার ব্যবসায়ী। আগামীতেও সকলকে সাথে নিয়ে টেরিবাজারের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ও টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, আসন্ন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির ১১তম দ্বি-বার্ষিক (২০২৪-২০২৬) নির্বাচনে গত ২৪ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন প্রার্থী এবং প্রার্থীর সমর্থকরা। ২৫ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ সময় ছিল। ২৬ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়। এই বারে ৪১জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মোট ২১টি পদের মধ্যে ২০ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৭৪০টি। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মফিজুল ইসলাম (রয়েল) বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আমেজ চলছে। কোন ধরনের বাধা নেই। এজন্য প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আশা করি একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবসায়ী সমাজকে উপহার দিতে পারবো।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন ব্যবসাবান্ধব ও যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচিত হলে টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এ ধরনের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য আমি ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানায়। আমি গত কমিটিতে সফলভাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছি। ব্যবসায়ীরা আমাকে যোগ্য মনে করলে আবারও নির্বাচিত করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
সাধারণ সম্পাদকপ্রার্থী মো. আবুল মনসুর বলেন, সারা বাংলাদেশ এখন একটা সংস্কারের পথে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি টেরিবাজার ব্যবসায়ী এলাকায় বিশাল সংস্কারের প্রয়োজন আছে। বিগত দিনে আমি দেখেছি, এই টেরিবাজারে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি ‘উর্বর’ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে ব্যবসায়ী সমাজকে মুক্তিদানের জন্য নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন এবং সংস্কার অতীব প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমি বিগত দিনে তিনবার অর্থসম্পাদক ও একবার যুগ্ম সম্পাদক পদে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি যদি নির্বাচিত হই, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমাজকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, প্রতিহিংসামুক্ত এবং সম্প্রদায়িকতামুক্ত করার অঙ্গীকার করছি।
উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যকেন্দ্র টেরিবাজারে ৮২টি শপিংমল এবং প্রায় ২ হাজার ৫০০ দোকান আছে। বলা হয়, ঢাকার ইসলামপুরের পরে এটিই দেশের পাইকারি কাপড়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানে পাইকারি ও খুচরায় কাপড় কেনাকাটা চলে সারাবছর।