নিষিদ্ধ ‘আনসার আল ইসলাম’ ভিন্ন নামে

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ ভিন্ন নামে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব। ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহসহ নানা তৎপরতায় জড়িত তিন জনকে আটকের পর এমন তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত কক্সবাজারের চৌফলদন্ডী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই তিন জনকে আটক করা হয়। আটকরা হলেন, জামালপুর জেলার ইসলামপুর এলাকার আবদুল ওহাবের ছেলে মো. জাকারিয়া মন্ডল (১৯), ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার নুরুল আমিনের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ (২১) ও ফেনী জেলার সোনাগাজির ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. ওজায়ের (১৯)।
অভিযানে উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরির ম্যানুয়াল উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার আরাফাত বলেন, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এবং র‌্যাব-৭ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আটক তিন জনই ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ যোগদান করে।
র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হওয়ায় তারা ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রæপ তৈরি করে।
আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী এই গ্রæপের নামেই নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে তারা। খবর বিডিনিউজের
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫-১০০ জন। এই গ্রুপটির প্রধান হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। তারা বাংলাদেশকে এই সংগঠনের একটি শাখা বলে দাবি করে। এই আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন র‌্যাবের হাতে আগে গ্রেপ্তার হওয়া ইসমাইল হোসেন। এই গ্রুপের অন্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে’।
তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করত। পরে তাদেরকে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো।
এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো।
র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আটক তিনজন জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেপ্তার হয়। তাই সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন রিক্রুটিং করছে তারা।
উঠতি বয়সী কিশোরদের অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজে ‘ব্রেন ওয়াশের’ মাধ্যমে ভুলপথে নেওয়া যায় বিধায় প্রথমে তাদের টার্গেট করা হয়। সেজন্য সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই ১৯-২০ বছর বয়সী তরুণ এবং মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক।
এছাড়া সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। সংগঠনের মাদ্রাসা শিক্ষক সদস্যরা অত্যন্ত সুকৌশলে মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতেন।
এ ছাড়া তারা সংগঠনের সদস্যদের গোপনে শারীরিক প্রশিক্ষণও প্রদান করত বলে জানা যায়। জঙ্গি সংগঠনটির বাংলাদেশের পরবর্তী সম্ভাব্য আমিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরা কক্সবাজারে একত্রিত হয়েছিল।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আটক জাকারিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের আমির সালাহউদ্দিন ও ইসমাঈলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
তাদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের ময়মনসিংহ ও জামালপুর অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্ব পান।
অন্যদিকে নিয়ামত এবং ওজায়ের চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি মাদ্রাসার কিতাব শাখায় অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে একজন জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন এবং মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন।
এ ব্যাপারে মামলা করে আটকদের কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা আরাফাত ইসলাম।