নির্মাণ কাজে ‘কিছু ত্রুটি’ পেল তদন্ত কমিটি

18

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজে ‘কিছু ত্রুটি’ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকল্পটির অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় খতিয়ে দেখতে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কমিটি। নগরের লালখান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। গতকাল বেলা ১২টার দিকে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে পরিদর্শন শুরু করে কমিটি। পরে তারা লালখান বাজার মোড়ে এসে পরিদর্শন শেষ করেন।
তদন্ত টিমের প্রধান এম এ লতিফ বলেন, আমরা পতেঙ্গা অংশ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে দেখেছি। এক্সপ্রেসওয়ের উপরে দুপাশের সীমানা দেয়ালে যে ক্লাম লাগানো হয়েছে- সেগুলো মানসম্মত নয়। ফিনিশিংয়ে কিছু সমস্যা আছে। দুয়েক জায়গায় রডও বেরিয়ে আছে। এসব অসঙ্গতি প্রকল্প পরিচালক ও কনসালটেন্টকে দেখিয়েছি।
তিনি বলেন, কিছু ফাটল এখানে (লালখান বাজার অংশের পিলারে) দেখেছি। ছবি তুলে নিয়েছি। আমরা বিশেষজ্ঞ নই। বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করব। আমাদের তিন মাস সময় আছে। নির্মাণ কাজে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা সব দেখে প্রতিবেদন দেব। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এতে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। অনিয়ম হলে জেল জরিমানাসহ সব শাস্তি হবে, সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।
এম এ লতিফ বলেন, একটি সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে দুটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এই কনস্ট্রাকশনে কোনো ত্রুটি আছে কি-না, কোনো অনিয়ম আছে কি-না, সেটি দেখার জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি একটি উপ কমিটি করে দেয়। সেই উপ কমিটির প্রধান হিসেবে আমার সহকর্মী সংসদ সদস্যদের নিয়ে পরিদর্শনে এসেছি।
এর আগে গত ১০ জুন সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে আহব্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য পারভীন জামান। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করেন উপ-কমিটির সদস্যরা।
নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নগরের লালখান বাজার থেকে শুরু হয়ে পতেঙ্গায় গিয়ে শেষ হয়েছে। মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো র‌্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র‌্যাঙ্কিন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি চট্টগ্রাম নগরের ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ এর উদ্বোধন করেছিলেন।
উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং- চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে। ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি র‌্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হলে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ১৪টি র‌্যাম্পের মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে।
শুরু থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজে নানা ধরনের বাধা ছিল। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, বন্দর সংলগ্ন এলাকার নকশা পরিবর্তন এবং সর্বশেষ সিআরবি এলাকায় র‌্যাম্প নির্মাণে গাছ কাটা নিয়ে জোরালো আপত্তি উঠে। এরমধ্যেও মূল উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।