নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেবে বিএনপি

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের সব বিষয়ে বিএনপির সমর্থন থাকার কথা তুলে ধরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হতে যে সময় লাগবে তা বর্তমান সরকারকে দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার বিকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার অর্জনকে নস্যাৎ করতে নির্যাতনের গল্প ফাঁদা হচ্ছে।
একই সঙ্গে ছাত্র, শিশু ও রাজনৈতিক নেতাদের ‘হত্যার’ বিচারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলে তাতে সরকারকে সমর্থন দেবে বলে তিনি তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে (সোমবার) নির্বাচন নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি আপনারা জানেন যে, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টি আমরা অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।
আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, সা¤প্রদায়িকতার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এবং জনগণ ঠিক পূর্বের মতোই সেই সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিকে অক্ষুন্ন রেখে, তাদের নিরাপত্তাকে অক্ষুন্ন রেখে তারা যেন সরকারকে সহায়তা করে এবং আমরাও পুরোপুরিভাবে তাদেরকে সেইভাবে সহায়তা করছি।
ছাত্র-জনতার প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার চতুর্থ দিনে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন।
গতকাল বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়।
বর্তমান সরকার কী কী করছে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে বিএনপি নেতারা অবহিত হয়েছেন বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান ফখরুল। সরকারের করণীয় নিয়ে দলের পক্ষ থেকে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুক্ত পরিবেশে এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম আমাদের সঙ্গে আজকে তারা বসেছেন। আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায় এ বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন কী কী করেছে, কী কী করতে যাচ্ছেন। এখন আমরা মনে করি, এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মহলটি যারা বাংলাদেশের অধিকার হরণ করে নিয়েছিল। তারা আবার বাইরে থেকে বিদেশ থেকে, এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশের যে বিজয় অর্জন হয়েছে জনগণের সেই বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছে।
আমরা একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছি যে, এখানে তথাকথিত মাইনোরিটির ওপরে নির্যাতনের যে একটা গল্প ফাঁদা হয়েছে সেই গল্পটা পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যমূলক, বাংলাদেশকে ম্যালাইন করা, সরকারকে ম্যালাইন করা, ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেওয়ার আরেকটি চক্রান্ত।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। সরকার পতনের তৃতীয় দিনে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। এর তিন দিন পর বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বিএনপির ৯ সদস্যের দলে ছিলেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এত হত্যা, এত নির্যাতন, এত নিপীড়ন, এতগুলো ছাত্রদের হত্যা করার পরও সেই দলটি (আওয়ামী লীগ) আবারও তারা বিভিন্ন রকমভাবে কথা বলছে, যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি সরকারের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ’অবশ্যই’ কথা বলবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু হত্যাকারীর সঙ্গে যারা ছাত্রদের হত্যা করেছে, যারা শিশুদের হত্যা করেছে, যারা রাজনৈতিক নেতাদেরকে হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে। এবং এই ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে গেলে আমরা সরকারকে অবশ্যই সমর্থন দেব।
বিএনপির বৈঠকের পর ৫টায় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।