নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ চাই

3

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

দেশে নিত্যপণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখি। যা এখনো চলমান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের পটপরিবর্তনের পর নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন এই বাস্তবতায় সাধারন মানুষের আকাংখা অনেক। যার ফলশ্রæতিতে অনেকে নানা দাবি নিয়ে সরব। যদিও নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে সবকিছু গোছানোর জন্য। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। এমনিতে আমাদের দেশে যে পণ্যের দাম বাড়ে তার বেশিরভাগই কমেনা। কমলেও বাড়ার প্রবণতা থেকেই যায়। অর্থাৎ একটি পণ্যের দাম ৫০ টাকা বাড়ার পর যখন কোন কারণে কমে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়তো ৫/১০ টাকার বেশি হয়না। সিন্ডিকেট হোক বা অন্য যে কারণেই হোক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে যারাই থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, নিত্যপণ্যের দামে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ, মধ্যবিত্ত লোকজন। সেখানে এই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তারা যাবে কোথায়? চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করেন অনেকেই। এর আগে অর্থ উপদেষ্টা নিজেও দ্রব্যমূল্য কমানোর আশা করেছেন।
অর্থাভাবে বিশেষ করে দুর্মূল্যের এই বাজারে সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকাটাই এখন দুঃস্বপ্নের মতো। দাম বাড়তির এই সময়ে প্রায় সব দ্রব্যের দাম দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বাজারে মুদি মালামালসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। পাশাপাশি মাছ-মাংস, মুরগীর দামও সহনীয় নয়। দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারন মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কীভাবে দিনযাপন করবে তারা? গ্যাস, বিদ্যুতের দামও বেড়েছে নিয়মিত। দাম বাড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। আজ (৩১ আগস্ট) কমানো হয়েছে জ্বালানীর মূল্য যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি কমেছে যে কারণে নিত্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা আছে। যদিও চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা দীর্ঘায়িত হতে পারে। যারা দিনে আনে দিনে খায় বা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে তাদের অবস্থা একেবারে সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। কেননা প্রতিদিন তো আর কাজ পায়না তারা। একেবেলা খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা। এসব মানুষের কষ্টকর জীবন দেখে মনটা কেঁদে উঠে। বউ-বাচ্চার ঠিকমত খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেকে অন্যায়ের পথ বেছে নেয় কিংবা জীবন বিসর্জনের মতো ভুল পথে পা বাড়ায়। অনেক দরিদ্র মানুষ ভিক্ষাবৃত্তির পেশা বেছে নিতেও বাধ্য হয়। এ ধরণের পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। মানুষের অভাব দূর করতে রাষ্ট্র ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে।
কাজের আশায় দরিদ্র মানুষ গ্রাম ছেড়ে এখন শহরমুখি। দূরে পরিবার, সন্তান, আত্মীয়, পরিজন রেখে কাজের খোঁজে ছুটেন তারা। কখনো বা এখানে কখনো বা ওখানে। একটি কাজ পেলে হয়তো জীবনটা অন্ততঃ বাঁচানো যাবে এ আশায়। অনেকে তিল তিল করে জমানো সঞ্চয় ভেংগে খেতে বাধ্য হচ্ছে। কোন উপায় যে আর নেই! কেউ কেউ ঋণ করছেন। আবার সেই ঋণের টাকা শোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। পুষ্টিকর আর সুস্বাদু খাবার দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে। বলতে গেলে এরকম খাবার তারা কখন খেয়েছেন বা কখনো খেয়েছেন কিনা মনে করতে পারেননা। এভাবেই চলছে দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনযাত্রা। লক্ষণীয় বিষয় হলো গরিব আরো গরিব হচ্ছে, ধনী আরো ধনী। যে কারণে ব্যবধানটা বাড়ছেই। দুর্মূল্যের বাজারে তাই দরিদ্র মানুষ বেঁচে আছে, যেন সেটাই যথেষ্ট! নতুন সরকার আর নতুন পরিবেশে এসবের অবসান হবে বলে আশা করছি।
দুর্নীতি আর বিদেশে পাচারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়ার খবর বেরিয়েছে। অথচ দেশের দরিদ্র মানুষগুলো খাবার পাচ্ছেনা, কাপড় পাচ্ছেনা, সন্তানদের স্বাভাবিক চাহিদাটুকুও মেটাতে পারছেনা। উচ্চবিত্ত ও উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ছাড়া বাকি সব মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলা যায় দ্রব্যমূল্যের এই চরম ঊর্ধ্বগতির কারণে। এখন পাচারকারী আর রাঘববোয়ালরা একে একে ধরা পড়ছে। আশা করা যায় এসব অনিয়ম এবার কমবে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা হবে। মূলতঃ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্যয় বেড়েছে ঠিকই সে অনুযায়ী মানুষের আয় বাড়েনি। কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছেনা। পাশাপাশি আগের সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে প্রভাবশালীদের প্রভাব থাকার কারণে অনেক দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর আগে প্রভাবশালী মহলের কেউ কেউ দরিদ্র এসব মানুষের ত্রান ও টাকাপয়সা মেরে খেয়েছে। এখন অবশ্য এসব কুকর্ম করার আর সুযোগ তেমন নেই। মানুষের দারিদ্রাবস্থা দূর হলে গৃহিত সব পরিকল্পনাই সুফল দেবে। সিন্ডিকেট ভাঙার কঠিন কাজটি করতে হবে নতুন সরকারকেই। এটি করতে পারলে দাম অনেকটা সহনীয় হয়ে আসবে বলে মনে করি। দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ধনী ও সামর্থ্যবান মানুষকে দারিদ্র দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রকৃত দরিদ্র মানুষই যেন সরকার ও বিত্তশালী মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে দরিদ্রতা দূর হবে।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট