নারীর মানসিক স্বাস্থ্য

6

ডা. সোমা চৌধুরী

আমাদের দেশে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য অগোচরে থাকার মতো একটি বিষয়। এখনো নারী-পুরুষ সবার মাঝে মানসিক সমস্যা দেখা দিলেও নারীদের মানসিক সমস্যাগুলো বেশিই হয়। যেসব সমস্যা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো- বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা, পোস্ট পার্টাম মেন্টাল ডিজঅর্ডার, সোমাটো ফর্ম ডিসঅর্ডার, পোস্ট মাস্টিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, কনভার্সন ডিজঅর্ডার ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রতি পাঁচজনে একজন নারী অবসাদে ভুগছেন। বিশেষ করে টিনএজ মেয়েদের নিজেদের ক্ষতি করার প্রবণতা বাড়ছে। যেসব কারণে নারী মানসিকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে তার মধ্যে রয়েছে- সহিংসতা, শিশুকালে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, অপুষ্টি, দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা, কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া, একঘেঁয়ে কাজ, নিজেকে প্রকাশ করতে না পারা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, বর্ণ বৈষম্য, শারীরিক সৌন্দর্যে ঘাটতি, সামাজিক কুসংস্কার, কিশোর বয়সে নানা প্রতিক‚লতা, বয়সভেদে হরমোনের প্রভাব, প্রসব পরবর্তী সময়ে জটিলতা ইত্যাদি। পুরুষের তুলনায় নারীর মানসিক সমস্যা বেশি কিন্তু তারা চিকিৎসা পান কম। এর পেছনে রয়েছে লোকলজ্জা, কুসংস্কার আর পরিবারের অবহেলা। পৃথিবীজুড়ে নারীদের বিষণ্ণতার হার পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ। আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর ৪০ শতাংশই বিষণœতার কারণে ঘটে থাকে। মাসিকের সময়, গর্ভকালে, প্রসবকালে, প্রসবের পর, মেনোপজাল সময়ে মেয়েদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা যায়। বেশিরভাগ পরিবারে মূল উপার্জনকারী পুরুষ। তাই পুরুষের অসুখ বিসুখে তারা দ্রæত সেবা ও চিকিৎসা পায়। কিন্তু মেয়েদের অসুখগুলো পরিবার, বিশেষ করে শ^শুর বাড়ির লোকজন আমলেই নেয় না। বদনামের ভয়ে অনেকে মেয়েদেরকে মানসিক রোগের জন্য চিকিৎসকের কাছেও নেয় না। নারীরাও নিজেদের শরীর এবং মন সম্পর্কে উদাসীন, সচেতন নন। তাদের মধ্যে রোগ লুকানোর প্রবণতা খুব বেশি। অনেকে মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলেও সেখানে ভর্তি করতে চান না কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপ্রতুল মহিলা সিট এর সমস্যার কারণে মহিলা রোগীকে ভর্তি করেন না।
মানসিক রোগ দেখা দিলে মেয়েদের উচিত, লুকিয়ে না রেখে মানসিক সমস্যার কথা খুলে বলা আর যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা। শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক সুস্থতা উভয়ই জরুরি। দীর্ঘ চলার পথে উত্থান পতন থাকবেই। তবে সেটাকে আবর্তিত করে সবকিছু মোকাবেলা করেই জীবন চালাতে হবে। সবসময় অস্বাভাবিক চাপ নিতে থাকলে একসময় শরীর-মন উভয়ই বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই দিনের যে কোন সময় নিজেকে নিজের সময় দিতে হবে এবং যত্ন নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত আহার, পর্যাপ্ত ঘুম, চাপমুক্ত জীবন, নিয়ম মাফিক ব্যায়াম, গুণসম্পন্ন সময় কাটানো, ব্যস্ত থাকা, শখের কাজ করা, হতাশাগ্রস্ত না হওয়া, আত্মতুষ্টি রাখা, নিজের কাজ করা, পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানো, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যেকোন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা প্রয়োজন। বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে উদাসীনতা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নারীদের উচিত, মানসিক স্বাস্থ্য সুন্দর রাখতে নিজে সচেতন হওয়া এবং সামান্য সমস্যাতেই আলোচনা সাপেক্ষে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
লেখক: অবস্ ও গাইনী বিশেষজ্ঞ