নাগরিক সমাজের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

সমন্বয়কদের মুক্তি; কারফিউ প্রত্যাহার ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ; নিহত সব মৃত্যুর সঠিক ও স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পূর্ণ মাত্রায় খুলে দেওয়াসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন তারা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী হলে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ আয়োজিত ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি ও আহবান জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সংবাদ সম্মেলনে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে অনেক অন্যায়-অনাচার মুখ বুজে সহ্য করেছি। এনাফ ইজ এনাফ, এই কথা বলার সময়ও অনেক আগে পার হয়ে গেছে। এখন আমাদের সন্তানদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে আমাদেরই ট্যাক্সের পয়সায় কেনা গুলি দিয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আজ দেশের তরুণদের বিরুদ্ধে কিছু গত হওয়া ৭০ থেকে ৮০ বছরের মন্ত্রীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, যারা এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। শুধু স্থাপনা ধ্বংসের কথা বলে, কেউ তো এখনও কাউকে কোনও হত্যাকান্ডের জন্য গ্রেপ্তার করলো না। আবু সাইদের মৃত্যু ইটের আঘাতে হয়েছে বলছে পুলিশ। মশকরা করেন নাকি? আমরা দেখি নাই কী হয়েছে? এসব করে মানুষের ক্ষোভ আরও উসকে দিচ্ছেন আপনারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, আমি শিক্ষক হিসেবে কীভাবে আমাদের ছাত্রদের মুখোমুখি হবো তা আমি জানি না। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। একটা সিস্টেম কতটা নষ্ট হলে ২০২৪ সালে এসে একজন শিক্ষার্থীকে ১৯৬৯ সালের একজন শিক্ষকের কথা মনে করতে হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফ সোহেল। ১৮ তারিখ ও ক্যাম্পাসে মিছিল করছে, এ রকম অনেক ছবি ভিডিও আছে। কিন্তু ওকে ঢাকার একটি স্থাপনায় হামলার মামলায় রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। এ থেকে তো বোঝা যায় সরকার কী করছে। সরকার বাংলাদেশের স্পিরিট ও সংবিধান, আইন সব নষ্ট করে ফেলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্দোলনের ইতিহাস পুরনো। কিন্তু এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে প্রতিরোধ তা অনবদ্য। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যে সাহস দেখিয়েছে, তা আমাদের সাহস দিয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক বলেন, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে সরকারের পাঁচটি বাহিনীর লোকজন হাসপাতালের স্টাফদের জোর করে সরিয়ে চিকিৎসাধীন সমন্বয়কদের নিয়ে যায়। পরে জোর করে রিলিজ অর্ডার নেয়। শিক্ষার্থীদের যারা মারলো, তারা বলছে তারা নাকি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার ভুলে গেছে বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। ক্ষমতার ভিত্তি না থাকলে সরকার গণবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এখানেও তা-ই হয়েছে। রাষ্ট্রকে একটি নজরদারিভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আজ কার কাছে বিচার চাইছি? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে? বাংলাদেশে এমন কোনও অপরাধ নেই, যার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন জড়িত নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা ডিবি কর্মকর্তাদের ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিচ্ছি। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি ছয় সমন্বয়ককে নিঃশর্ত মুক্তি না দেয়, তবে আমরা ডিবির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এমন বিপুল সংখ্যক হতাহতের নজির গত ১০০ বছরের ইতিহাসে আমাদের দেশে বা উপমহাদেশের অন্য কোথাও নেই। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে নিরস্ত্র আন্দোলনকারী, পানি বিতরণকারী কিশোর, পলায়নরত ছাত্র ও ছাদে খেলতে যাওয়া শিশুর মৃত্যুর যে হৃদয়বিদারক বর্ণনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে বলপ্রয়োগ ও সহিংসতার মাত্রা সব সীমা অতিক্রম করেছে এবং সাংবিধানিক ও আইনি সব সুরক্ষা লঙ্ঘিত হয়েছে।
এ সময় ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের মুক্তি; কারফিউ প্রত্যাহার ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ; নিহত সব মৃত্যুর সঠিক ও স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি; হতাহত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহার ও বল প্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত; হতাহত নাগরিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ; নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া; ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পূর্ণ মাত্রায় খুলে দেওয়াসহ ১১ দফা দাবি জানান তারা।