নতুন শিক্ষাক্রম : জীবন ও জীবিকা

2

নাজনীন আমান

মহান আল্লাহ মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। মানুষের বেঁচে থাকতে হলে জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন। জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে জীবিকার প্রয়োজন। রাব্বুল আল আমিন পৃথিবীতে তাঁর বান্দাদের জন্য অনেক নেয়ামত ও রিযিক দান করেছেন। মানুষ কে তা খুঁজে বের করতে হয় তারই জীবনের প্রয়োজনে। মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এই চাহিদা গুলো পূরণ করার জন্য জীবিকার প্রয়োজন। জীবন ও জীবিকা একে অপরের পরিপূরক। সেই শিক্ষা ও জ্ঞানকে উপলব্ধি করার নিমিত্তে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে ‘জীবন ও জীবিকা’ নামক একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব একটি মতামত।
গত ১৬ মে, ২০২৪ ‘জীবন ও জীবিকা’ এই বিষয়টিকে আরও কার্যকরী করতে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও তত্ত¡াবধানে আয়োজন করা হয় একটি মেলা। যেখানে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নিজেরাই উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, বিক্রেতা, আয়োজক। আর বাকী শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীরা হল দর্শক ও ক্রেতা। একটু চিন্তা করলে বিষয়টা কিন্তু বেশ দারুণ। সেদিন স্কুলের প্রত্যেক বাচ্চাই বেশ মজা ও আনন্দময় দিন পার করেছে অপ্রত্যাশিতভাবে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পন্য, খাবার, রকমারি সাজের জিনিস, খেলনা, লটারী শো দিয়ে সাজিয়ে তোলে একেকটি স্টল। কেউ কিনছে খাবার, কেউবা সাজের জিনিস, কেউ বা অংশগ্রহণ করেছে লটারিতে। কে কার চাইতে আকর্ষণীয়, মজাদার, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় পরিবেশন করতে পারে তাই নিয়ে খাবার ও পানীয় স্টল গুলোতে ছিল চাপা উত্তেজনা ও শীতল প্রতিযোগীতা। কেউ যা দাম তাই কিনছে, কেউ দামে না হলে কিনছে না আবার কেউ কেউ তো একদম কড়া ক্রেতা, বেশ দামাদামি করেই জিনিস কিনছে। এতে করে দুই পক্ষই বাস্তবিক কিছু শিক্ষা লাভ করছে। দরদাম করতে পারাটাও যে একটি শিক্ষা বা জ্ঞান তা শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেছে।
আজকাল শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে বিভিন্ন ডিভাইস, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত রাখছে। এতে করে তাদের ভিতর যে প্রতিভা আছে তা বিকশিত হচ্ছে না। তবে এ ধরনের আয়োজন থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভেতর যে সুপ্ত প্রতিভা আছে তা বিকশিত করতে পারে। সবাই সমান হয় না। কেউ অন্তর্মুখী, তো কেউ বহির্মুখী স্বভাবের হয়। যারা বর্হিমুখী তারা সব কিছুতে এগিয়ে থাকতে পছন্দ করে, স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে। আর যারা অন্তর্মুখী, তারা কিছুটা লাজুক হয় বলে নিজেরদেরকে বিকশিত করতে পারে না সঠিকভাবে। এ ধরনের কার্যক্রমে অন্তর্মুখী ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের প্রতিভাকে কিছুটা হলেও পরিচর্যা করতে পারে। তাদের কে সুযোগ দিতে হবে তবেই না তারা নিজেদের কে মেলতে পারবে ফুলের পাপড়ির মত। একদিন এই ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে থেকেই কিন্তু ভবিষ্যতের বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী উঠে আসবে। কাজগুলোতে রয়েছে প্রচুর আনন্দ। স্কুলে প্রত্যেকেই এই ধরনের কাজগুলোতে সংযুক্ত হয়ে তাদের মধ্যে বাস্তবিক জ্ঞান কে আরও বাড়াতে পারবে।
একঘেয়েমি ও গৎবাঁধা পড়াশোনার মধ্যে এই আয়োজন ছিল ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত’। এই আনন্দময় দিনের কথা শুধু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সকল শিক্ষর্থীদের মাঝে আলোর পরশ বুলিয়ে যাবে। সকল নবম শ্রেণির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এ ধরনের আয়োজনে ছাত্র ছাত্রীদের স্মৃতির ঝুলিতে আরেকটি গল্প জমা হয়ে গেল।
লেখক: ডিওএইচএস, ক্যান্টনমেন্ট, চট্টগ্রাম