নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে ৫ম বারের পদক্ষেপ

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে আগামী অক্টোবরে। বিগত দুই বছরে এ নিয়ে পঞ্চমতম বারের মতো সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হলো। তবে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সম্মেলনের নির্দেশনা দেয়ায় এবারের সিদ্ধান্ত আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। অক্টোবরে নগর সম্মেলনকে টার্গেট করেই জুন-জুলাই মাসের মধ্যে অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন হবে। গতকাল দুপুরে কাজির দেউড়িস্থ সেনা কল্যাণ কনভেনশন সেন্টারে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।
বক্তব্যকালে হানিফ বলেন, আমরা চাই অক্টোবর মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের সম্মেলন করবো। এর আগে যতগুলো ধাপ আছে প্রত্যেকটি ধাপের সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। কোনো জোড়াতালি দিয়ে সংগঠন হবে না। সংগঠনের প্রতিটি স্তর ধাপে ধাপে শেষ করেই মহানগর সম্মেলন করবো। আমাদের প্রথমে ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৩২টি ইউনিটের মধ্যে ১০৫টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। ৪৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। ১৫টি থানার মধ্যে একটির সম্মেলন শেষ হয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে হবে। ওয়ার্ড এবং থানার সম্মেলনগুলো আগামী জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করতে চাই। আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস যেহেতু সম্মেলন হয় না। সে কারনে জুলাই মাসের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন শেষ করতে হবে। আগস্টের পর সেপ্টেম্বর মাস সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে রাখা হবে। অক্টোবর মাসেই আমরা সম্মেলন করবো।সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করে বাংলাদেশের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ঐতিহ্যগতভাবে অতীতের মতো শক্তিশালী অবস্থানে আছে সেটি প্রমাণ করতে হবে। কোথায় কখন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন হবে তার রোডম্যাপ আমরা তৈরি করবো। অক্টোবর মাসের কোন তারিখে মহানগর সম্মেলন হবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে জানানো হবে।
নগর সম্মেলন ঘিরে নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ২২মে তারিখ নগর নেতারা বসে কোথায় কখন সম্মেলন তা চূড়ান্ত করবেন। এর মধ্যে যেসব কমিটি নিয়ে সমস্যা আছে সেগুলো গুছিয়ে নেয়া হবে। যেগুলোর ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই সেগুলো বহাল থাকবে। অভিযোগ যেখানে আছে সেগুলো বসে নিষ্পত্তি করা হবে। কাউন্সিল হয়ে গেছে সেগুলো বহাল থাকবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ নির্বাচনগুলোতে আমাদের কোন প্রবল প্রতিপক্ষ না থাকলেও দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি খুব একটা শক্তিশালী হয়নি। বরং নিজেদের মধ্যে কলহ, বিবাদ ও বিভক্তি বেড়েছে। আরো বেড়েছে দলের মধ্যে হাইব্রীডের প্রবল ¯্রােত। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন নিজস্ব গ্রæপ ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধিও জন্য বাইরে থেকে ভিন্নমতের মানুষ দলে ঢুকানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সুনীল সরকার, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ প্রমুখ। সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৫ মে মহানগর আওয়ামী লীগের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ১ অক্টোবর সম্মেলনের ঘোষণা দেন। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নগরীর থানা ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সম্মেলনের তারিখ পেছানোর ঘোষণা দেন সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। আরও এক মাস পর ২৬ অক্টোবর একই ধরনের আরেক সভায় সম্মেলনের নতুন তারিখ ৪ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে একই দিনে (৪ ডিসেম্বর) দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করার ঘোষণা দেয়ায় তৃতীয় দফায় পেছানো হয় সম্মেলন। ওই সময় চট্টগ্রাম নগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় হুইপ স্বপন ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কথা জানান। চারবার সম্মেলন পেছানোর পর পুনরায় আবারোও সম্মেলনের দিকেই হাঁটছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মলেন হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১৩ সালরে ১৪ নভম্বেরে সম্মলেন ছাড়াই ঢাকা থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছর মেয়াদী কমিটি দেয়া হয়। ২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা গেলে সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। পরে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ভারমুক্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।