নগরীতে থেমে থেমে বৃষ্টি নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীতে গত বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এতে নগরীর বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া লোকজন।
আবহাওয়া অফিসের হিসেব মতে, চট্টগ্রামে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪৫.৪৬ মিলিমিটার। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গা পূর্বদেশকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি পাহাড়ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। এমনকি আজ (শুক্রবার) সারাদিন চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নগরের পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, ২ নম্বর গেট, বাকলিয়া ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার কোনো কোনো সড়কে কোমর সমান পানি জমেছে। এ কারণে সড়কে যানসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বৃহস্পতিবার সকালে অফিসগামী এবং নানা প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
তাছাড়াও সড়কের ওপর কোমর সমান পানি থাকার কারণে ভোর থেকে বন্ধ ছিল মুরাদপুর বহদ্দারহাট সড়কে যান চলাচল। এতে সড়কের উভয় পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মূল সড়ক থেকে পানি সরে গেলে পুনরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।
আগ্রাবাদ এলাকার মো. সামির হোসেন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে পানি জমে যায়। কোনো কোনো সড়কে রিকশা ছাড়া চলাফেরা করা যায় না। একারণে রিকশা ভাড়াও বেড়ে যায়। বছরের পর বছর এ ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না আমাদের। অথচ সরকার এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে।’
কাতালগঞ্জের বাসিন্দা জমির উদ্দিন জানান, ‘রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং সকালে ভারী বৃষ্টিতে চকবাজার এবং কাতালগঞ্জে পানি উঠেছে। কাতালগঞ্জে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং পার্কভিউ হাসপাতালের সামনের সড়কে কোমর সমান পানি জমেছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এখনও (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
সরেজমিনে সকাল ১১টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোমর সমান পানি হওয়া সত্তে¡ও কাপড় উপরে তুলে কর্মস্থলে ছুটছেন অনেকে। সকালের ভারী বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছেন কর্মজীবী মানুষজন। জলাবদ্ধতার কারণে খানিক দ‚রত্বেও যেতে চাইছিলেন না রিকশাওয়ালা। আর কেউ যেতে রাজি হলেও ৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা দ‚রত্বে ভাড়া হাঁকাচ্ছিলেন ৫০ টাকা। আশেপাশের দোকানপাটও ছিল পানিতে টইটম্বুর।
মুরাদপুর মাজার গেটের সামনে চাকরিজীবী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রচÐ বৃষ্টিতে হেঁটেই অফিসের দিকে যাচ্ছি। দেখছেন তো একেবারে কাকভেজা হয়ে গেছি। তাই ভারী বৃষ্টি থেকে একটু চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম। আর যে পরিমাণ পানি উঠছে মনে হচ্ছে বন্যা হয়েছে।’
মুরাদপুর মোড়ে রিকশা থেকে নামা সোহেল হোসাইন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বহদ্দারহাট থেকে এখানে আসতে স্বাভাবিক সময়ে ২০ টাকা ভাড়া নেয়। কিন্তু আজ বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ৫০ টাকা দিতে হলো। একে তো আমাদের দুর্ভোগ, দ্বিতীয়ত পকেটও সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমাদের সুফল কি আনছে, তা বুঝতে পারছি না। কাজ যা ধরেছে, তা শেষ কবে হবে তাও অনিশ্চিত।’
জানা গেছে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে শুরু হওয়া এসব প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হলে নগরবাসীর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দূর হয়নি। উল্টো দিন দিন সমস্যা প্রকট হয়েছে।