নগরজুড়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে নগরীর পথে পথে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস ও উচ্ছ¡াসে মেতে উঠেছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর পেয়েই রাস্তায় নেমে এসে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। এসময় উল্লসিত মানুষকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সবার মুখেই স্লোগান ছিল, ‘পালাইছে রে পালাইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে’, ‘ছি ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না’, ‘হই হই রই রই ছাত্রলীগ গেল কই’- ইত্যাদি। তাছাড়া পরিচিত অপরিচিত সবাই একে অপরকে সালাম বিনিময়ের পর ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানান। সোমবার যেন ঈদের দিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে যায় পুরো নগরীতে। সাথে সাথে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। অংশ নেন নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। আধাঘণ্টার মধ্যে বাকলিয়া নতুন ব্রিজ এলাকা, এক্সেস রোড, চকবাজার, চেরাগী, জামালখান, বহদ্দারহাট মোড়ে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করে বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর হয়ে বিজয় মিছিল আগায় লালদিঘীর পথে। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভাবেই খন্ড খন্ড বিজয় মিছিল এগোয় লালদিঘীর দিকে। নগরের সব পথ মিশে গেছে ওই ঐতিহাসিক ময়দানে। এছাড়াও বাসা-বাড়ি থেকে যুবতী, মহিলা, বৃদ্ধারা পর্যন্ত অলি-গলি থেকে শুরু করে সড়ক মহাসড়কে উল্লাস করতে বের হয়েছেন। তাদের চোখে-মুখেরও এক ধরনের স্বস্তির হাসি দেখা গেছে। যুবতীরা দলবদ্ধ হয়ে মাথায় জাতীয় পতাকা দিয়ে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়কে প্রদক্ষিণ করেন। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীদের হাতে ও মাথায় পতাকা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। বিকেল ৪টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, জামালখান, চেরাগীপাহাড়, নিউমার্কেট এলাকায় একজন অপরজনকে মিষ্টি খাইয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। এতে তারা ঈদের খুশি অনুভব করছেন বলেও জানান।
হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের শিক্ষার্থী আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও তা আমরা দেখিনি, আজকে স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ দেখলাম। আজ আমরা স্বাধীন। বিজয় আমাদের হয়েছে। আন্দোলনে নিহত হওয়া আমাদের ভাইদের রক্ত কখনও বেঈমানি করতে পারে না। তাদের মায়েদের বদদোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।’
মুরাদপুর এলাকার জামাল হোসেন মিষ্টি বিতরণ করার সময় বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর ধরে মানুষ কোনো কথা বলতে পারে না। আজকে মন হালকা হচ্ছে। জাতির এই আনন্দ মুহূর্তে ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের আত্মত্যাগ ভোলা যাবে না। এ মিষ্টি খুশির, এ মিষ্টি আনন্দের।’
বাকলিয়া সৈয়দ শাহ রোডের ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। কি যে আনন্দ লাগছে বোঝাতে পারবো না। এ বিজয় নির্যাতিত ছাত্র জনতার।’
সন্ধ্যায় জামালখান মোড়ে জড়ো হওয়া মানুষ ‘জিতেছেরে জিতেছে, ছাত্রসমাজ জিতেছে’, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘ভুয়া ভুয়া’ সহ সরকার পতনের নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এদিন সড়কে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। তাদের অনেকের হাতে ও মাথায় শোভা পাচ্ছিল বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা।
এর আগে বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এর আগে বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এসময় তার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। চট্টগ্রাম নগরীর পাশাপাশি ঢাকার শ্যামলী থেকে ধানমন্ডি ২৭ এ লাখো লোকের সমাগম দেখা গেছে। মোটরসাইকেল হর্ন বাজিয়ে উল্লাস করতে দেখা গেছে। গণভবনে লুট চালিয়েছে জনসাধারণ। লেকের মাছ থেকে শয়নকক্ষের বালিশ, কোনোটাই বাদ পড়েনি। গণভবনের স্মৃতি হিসেবে তারা এসব জিনিস নিয়ে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানান।