দ্রুত ট্রাফিক পুলিশ নিযুক্ত করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরানো জরুরি

12

চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর যানজট সমস্যা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম যানজটে নাভিশ্বাস উঠে নগরবাসীর। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ, সরকার বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও এর কোন বিহিত সমাধান আজ পর্যন্ত করা যায় নি। এরমধ্যে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সড়কে এখন কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলছে। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। যদিও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহবানে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিন্তু এটিতো সমাধান নয়। বলা যায়, শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অংশগ্রহণ আবেগতাড়িত, আন্দোলনের সফলতার উৎসব আয়োজন। এজন্য অবশ্যই তাঁদের প্রশংসা করতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোন মানবিক কাজে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। কিন্তু এর প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন চলতে পারে না। ছাত্রদের আসল কাজ তো লেখাপড়া। দীর্ঘ দুইমাস প্রায় আন্দোলনে-রাজপথে সময় কেটেছে তাদের। আমাদের মনে হয়, এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের পড়ার টেবিলে ও শিক্ষাঙ্গনে ফেরৎ পাঠাতে হবে। সড়কে যারা শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন, সেই ট্রাফিক পুলিশকেই এর নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংস আন্দোলনে রূপ নিলে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে। এসময় সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনায় হামলার ঘটনাও ঘটে। মূলত তখন থেকে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি, পুলিশ বক্স, থানা ও ফাড়িতে আক্রমণের পর অন্যান্য পুলিশের সাথে ট্রাফিক পুলিশও সরে যায়। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে কোথাও কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় নি। চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগীয় ও জেলা শহর কোথাও ট্রাফিক পুলিশের অস্থিত্ব দেখা যায় নি। ফলে দেশের সব শহর, সড়ক, মহাসড়কে স্থানীয়ভাবে শিক্ষার্থীরাই ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিয়েছেন।
ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের পর সুযোগ সন্ধানীরা দেশের প্রায় সাড়ে চারশত থানা ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেয়। এসময় থানা বা ফাঁড়িতে থাকা বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিহত হন। আহত হন সহস্রাধিক পুলিশ। অনেক থানায় রক্ষিত অস্ত্র, নথিপত্র এমনকি পুলিশের পোশাকও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয় । ফলে আতঙ্কে পুলিশশূন্য হয়ে যায় দেশের প্রায় সব থানা। ঘটনার প্রায় ৫দিন পর ধীরে ধীরে এখন পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জীবন ও চাকরীর নিরাপত্তা চেয়ে বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে নতুন আইজিপি নিয়োগ দিয়েছেন। আইজিপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন ও মধ্য সারির অফিসারদের সাথে কথা বলে দাবি-দাওয়াগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে বলে আশ্বস্ত করে দ্রæত মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বেশির ভাগ থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আমরা আশা করি, শিগগিরই ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমও শুরু হবে। এতে যানজটের নাকাল থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে। দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে, পুলিশ সরকারের নিজস্ব বাহিনী হিসেবে কাজ করে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবং মানুষের জানমাল রক্ষায় এ বাহিনীটি প্রত্যয়ী হলেও দলীয় সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে এ বাহিনীকে ব্যবহারে সচেষ্ট থাকত। এবারের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও এর ব্যত্যয় হয় নি। ফলে সরকার পতনের সাথে পুলিশও জনরোষে পড়েন। এ বিষয়টি স্বয়ং পুলিশের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা চলছে এবং বাহিনীটির সংস্কারের দাবিও উঠেছে। আমরা মনে করি, পুলিশকে একটি আদর্শিক ও নৈতিক জায়গায় নেয়ার এটি ভালো সুযোগ। পুলিশ যেহেতু কাজে ফিরেছে, ট্রাফিক পুলিশও দ্রæত তাদের কাজ শুরু করবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষও উপলব্ধি করতে পারছে, থানা পুলিশি কার্যক্রমের পাশাপাশি রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমও জোরেশোরে শুরু করা দরকার। জনজীবন পূর্ণদমে সচল হচ্ছে, সড়কে গাড়িও বেড়ে চলছে। এসময় ট্রাফিক পুলিশ না থাকলে জনদুর্ভোগ বেড়ে যাবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আর সড়কে রাখা ঠিক হবেনা বলে স্বয়ং বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিত নন। এখানে আইন ও নীতিমালা আছে, সেগুলো তাঁদের জানা না থাকাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া সড়কে যেকোনো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। ফলে অন্তর্বরর্তী সরকারের প্রতি দেশবাসীর প্রত্যাশা, দেশের সব শহরের সড়ক ও মোড়ে দ্রæত ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শুরু করুন। অন্যথায় বিশৃঙ্খলার জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে।