দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগই শাহাদাতে কারবালার দর্শন

8

হাজারো দ্বীনদার আহলে বায়তপ্রেমী মানুষের উপস্থিতিতে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে চলমান আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল বেশ প্রাণবন্ত ও উচ্ছাসমুখর হয়ে উঠেছে। ১০ দিনব্যাপী শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল বুধবার ছিল তৃতীয় দিন।
এদিন ভারত কলকাতার আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা সাখাওয়াত হোসাইন বারকাতী বলেছেন, ৬১ হিজরিতে পাষন্ড ইয়াজিদের হাতে ইসলামের স্বকীয়তা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। জনমত তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে ইয়াজিদ মসনদে বসেই মদ-জুয়া, ব্যভিচার-অনাচারকে বৈধতা দিয়ে ইসলামের শাশ^ত আদর্শের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। আর ইয়াজিদি বাতুলতার বিপরীতে বীরদর্পে ঈমানি শক্তি নিয়ে দ্বীনের স্বকীয়তা রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। দ্বীনের জন্য এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করাই শাহাদাতে কারবালার দর্শন।
মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চান্দগাঁও দরবারে বারীয়া শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরিকত আল্লামা সৈয়দ বদরুদ্দোজা বারী (মজিআ)। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গরু সারাদিন ঘাস খায় আর সর্বোত্তম খাদ্য দুধ দেয়। আর সাপ দুধ খায়, অথচ সে বিষ দেয়। এটাই তাদের স্বভাব ও ফিতরাত। এটা আমাদের বুঝতে হবে। আলেম অনেকেই আছেন। কিন্তু ইলমের সঙ্গে আমলের সংযোগ ঘটাতে হবে। ইলমের সঙ্গে ইশক মহব্বতের সংযোগই কাম্য।
যুব-তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জীবনে সফলতা ছিনিয়ে আনতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কাজে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। জমিয়তুল ফালাহর শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আমাদের ঈমানী চেতনার প্রতীক।
প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি বলেন, কারবালায় হক-বাতিল তথা সত্য-মিথ্যার মধ্যে চলা দ্ব›দ্ব-সংঘাতে হকপন্থি গণকল্যাণকামী ইমাম হোসাইনি কাফেলাই চূড়ান্ত বিচারে জয়ী হয়েছে। ইয়াজিদ ধিকৃত, পরাজিত ও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুন্নিয়ত চর্চার একাল-সেকাল বিষয়ে আলোচনা করেন পাহাড়তলী নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ এনামুল হক সিকদার। তিনি বলেন, যুগে যুগে নানা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুন্নিয়তচর্চা চলে আসছে। শরিয়ত-তরিকতের অনুশীলন ও সুন্নিয়তচর্চা কখনো থেমে ছিল না। তাসাউফ, সূফিবাদ ও মাজহাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ধিকৃত হয়ে আছেন ইবনে তাইমিয়া ও মওদুদী। এ ভ্রান্ত মতবাদীদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে আজ জিকির উঠে গেছে, তরিকতচর্চা উঠে যাচ্ছে। রুহানিয়তচর্চা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
সাহাবীগণের দৃষ্টিতে আহলে বায়তের মর্যাদা বিষয়ে আলোচনা করেন রাউজান গহিরা এফকে জামেউল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দিন আলকাদেরী। তিনি বলেন, সাহাবীগণের মাথার মুকুট হচ্ছেন আহলে বায়তে রাসূল (দ.)। আহলে বায়তে রাসূলকে (দ.) ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাঁরাই সর্বোচ্চ মানদন্ড দেখিয়ে গেছেন।
এতে অতিথি ছিলেন আঞ্জুমান রিসার্চ সেন্টারের গবেষক আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ রফিক উদ্দীন সিদ্দিকি, আঞ্জুমানে-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক চৌধুরী।
কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। নাতে রাসুল (দ.) পেশ করেন শায়ের মোহাম্মদ তানভীর।
ড. আল্লামা জাফর উল্লাহর সঞ্চালনায় মাহফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ সহ বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদনশীনগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক আলী হোসেন সোহাগ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মো. আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক, আলহাজ সিরাজুল মোস্তফা, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, আলহাজ মোহাম্মদ দিলশাদ আহমেদ, মোহম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, আবদুল হাই মাসুম, মাওলানা আবুল হাশেম শাহ, শাহাজাদা আমানুল্লাহ আহাসান, হাফেজ ছালামত উল্লাহ, এস এম সফি, ক্যাপ্টেন এনামুল হক, এএফ মোহাম্মদুর রহমান, উপাধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল ওয়াদুদ, মাহবুবুল আলম, খোরশেদ আলী চৌধুরী, মৌলানা নুর মোহম্মদ আলকাদেরী, হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক, হাফেজ জালালুদ্দীন, ফজলুর রহমান সাহেদ, মাইনুদ্দিন মিঠু, শরফুদ্দীন জঙ্গী, অধ্যাপক অহিদুল আলম প্রমুখ।
সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন থেকে পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা থাকবে। বিজ্ঞপ্তি