দ্বিতীয় দিনেও অচল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা। এই কর্মবিরতির কারণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস, পরীক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কাজ অচল হয়ে পড়েছে।
গতকাল সকাল থেকে এ কর্মবিরতি পুনরায় শুরু করেন তারা। এর ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত-উপাদানকল্প ১৯৮ কলেজের শিক্ষার্থী ও সেবাপ্রার্থীরা।
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস, পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতিও শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মবিরতিতে গেছেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার লাইব্রেরির সামনে ইটপাটকেল ছুড়েছেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে দাবি না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া। তারা সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ এর প্রজ্ঞাপন বাতিল ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল নয়টার দিকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি দিয়ে কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। আর প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশপথে জড়ো হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
ঢাবির বিভাগ-ইনস্টিটিউটও বন্ধ থাকায় কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে সেখানে দেখা যায়নি। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবন ফাঁকা এবং কিছু কক্ষ তালাবন্ধ দেখা গেছে। কিছু খোলা থাকলেও সেখানে কোনো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ফিরে যেতে বাধ্য হন সেবাপ্রার্থীরা।
এর আগে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া।
এরপর আলাদা আলাদাভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবির মধ্যে আছে, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
পেনশন নিয়ে অন্যরা তো আন্দোলন করছে না। আমরাও যেন আন্দোলনের পথে না থাকি, আমাদের যেন আন্দোলন করা না লাগে, সেই ব্যবস্থা সরকার করবে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনায় বসা হয়নি। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের বিষয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছি, যোগ করেন ঢাবির এ অধ্যাপক।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম কোনোভাবেই প্রত্যাশার বিষয় নয়। কখনো কোনো আইন এভাবে কেউ পাস করে? কৌশলে রাতারাতি একটি আইন তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) জন্য প্রযোজ্য না। ধারণা করছি, সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া ইচ্ছে করেই আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।