দেশ পুনর্গঠনে মার্কিন সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

10

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা এবং ‘চুরি হওয়া’ সম্পদ পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রোববার উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর তাঁর প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়। সাক্ষাতে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ছাত্র-জনতার তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পতনের তিন দিনের মাথায় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থা এমনকি সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার দ্রæততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।’ তিনি ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, এই বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশাজাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ,জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।
স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের মাধ্যমে আত্মসাৎ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ইউনুসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং তার সংস্কার পরিকল্পনায় ওয়াশিংটন ডিসি সমর্থন করতে পেরে আনন্দিত বলেও জানান।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী চলা আলোচনায়, আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম বিষয়ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের জন্য আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়েও আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর, ট্রেজারি বিভাগের পরিচালক জেরোড ম্যাসন।
আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, সিনিয়র সচিব এবং এসডিজি বিষয়ক প্রধান লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।