দেওয়ানহাট-বারিক বিল্ডিং চলবে না রিকশা ও ভ্যান

22

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর ভিআইপি খ্যাত ব্যস্ততম সড়ক দেওয়ানহাট-বারিক বিল্ডিং সড়কে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। যা কার্যকর হবে আগামী ১ জুন থেকে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘একটা শহরকে গতিশীল করতে হলে প্যাডেলচালিত রিকশা বন্ধ করা জরুরি। এতে অনেক গাড়ি নির্দিষ্ট গতিতে চলাচল করতে পারবে। ঢাকায়ও এমন সিস্টেম চালু রয়েছে। তাছাড়া আমরা রিকশাচালকদের ক্রসিং এর ব্যবস্থা করে দিবো। যাতে যানজটটা কিছুটা কমে। এখন আপাতত দেওয়ানহাট থেকে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত রিকশামুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে শহরের অন্যান্য এলাকায়ও এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী ১ অথবা ২ জুন থেকে এটা কার্যকর হবে।’
তবে উদ্যোগটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরী রিকশা চালক মালিক ঐক্য পরিষদ। তাদের মতে, পূর্বে ২০০৯ এবং ২০১৯ সালে এমন সিদ্ধান্ত হলেও আন্দোলনের কারণে তা কার্যকর হয়নি। এবারও সংগঠনের সদস্যরা আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ মে) জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে জমায়েত হবেন এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবেন।
চট্টগ্রাম মহানগরী রিকশা চালক মালিক ঐক্য পরিষদ উপদেষ্ঠা টিটু মহাজন পূর্বদেশকে বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব ও বায়ু দূষণমুক্ত একমাত্র বাহন প্যাডেল রিকশা। দেওয়ানহাট হতে বারেক বিল্ডিং পর্যস্ত সড়কে আমাদের মালিক সংগঠনের আপত্তি থাকা সত্তে¡ও প্যাডেল রিকশা চলাচল বন্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা অত্যন্ত অমানবিক। এতে গরীব প্যাডেল রিকশা চালক-মালিকদের অন্ন সংস্থানের উপর আঘাত করা হয়েছে। অথচ দেওয়ানহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত মূল সড়কের উপর কার-মাইক্রোর গ্যারেজ রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদের বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ কিছুই করছে না। যত অত্যাচার গরীবের উপর। আবার উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও নগরীতে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা মূল সড়কে এসে পুলিশ প্রসাশনের নাকের ডগায় চলাচল করছে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে মহানগরীতে অবাধে পরিবেশবান্ধব প্যাডেল রিকশা চলাচলের দাবিসহ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদ প্রাঙ্গণে জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে সিটি মেয়র এবং সিএমপি কমিশনারকে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।’
ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই-এডমিন) ছামিউর রহমান খান বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের শেষ দিকেও সড়কটিতে রিকশা চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিছুদিন এ নিয়ম চলার পর পুনরায় রিকশা চলাচল শুরু হয়। কারণ ২০২০ সালের শুরুতে কোভিড মহামারীর কারণে সড়কে যান চলাচল এমনিতেই বন্ধ ছিল। এরপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের কারণে সড়কটি সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। তাই ওই উদ্যোগটি আর বেশিদিন চালু রাখা যায়নি। তবে এবারের উদ্যোগটি চলমান থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়র মহোদয় প্রস্তাবটি দিয়েছেন। আমরাও সানন্দে রাজি হয়েছি। সড়কটি নগরীর অন্যতম একটি ব্যস্ত সড়ক। সড়কটিতে যান্ত্রিক যানবাহনের ধীরগতির অন্যতম একটি কারণ রিকশা। ওই সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ থাকলে গাড়ির গতি বাড়বে। ফলে যানজটও কমতে থাকবে। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে আগামীতে ধাপে ধাপে টাইগার পাস থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাবে, নগরীতে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ৭০ হাজার ১টি। কিন্তু গত বছরের ১৭ মে থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রমে নিবন্ধন করা হয়েছে মাত্র ২১ হাজার ৩১৮টি লাইসেন্স। বাকিগুলো নবায়ন করেনি। এদিকে ৭০ হাজার নিবন্ধন থাকলেও নগরীতে তিন লাখেরও বেশি রিকশা চলাচল করে বলে জানায় ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি করর্পোরেশন।