দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে, কাউকে ছাড় নয়

12

ঢাকা প্রতিনিধি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। যেই হোক- দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব।
গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এবারের বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটকে মোটেও উচ্চাভিলাষী মনে করি না। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা সাদা, এটা কালো টাকা সাদা না। এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় যার এক কাঠা জমি আছে, সে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে যেয়ে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারে না, আয়কর দিতে পারে না। আয়কর দিয়ে যাতে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে… এ ধরনের কর্মকাÐ যাতে না করে, সে জন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিল, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই নিয়েছিল। বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, টেন্ডারের শুভংকরের ফাঁকির কথা উনি বলেছেন। টেন্ডার না দিয়ে কাজ দেওয়া। উনি তো মন্ত্রী ছিলেন টেন্ডার না দিয়ে কাজ করে, কাজের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করার বিষয় মনে হয় উনি নিজেই রপ্ত করেছেন।

সব বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল :
তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন-৫ এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হলে ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। মানুষ খুব আরামে চলাচল করতে পারবে। তাদের জীবনমান উন্নত হবে। আমরা সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল চালু করে দেবো, সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা হলে সাগরপাড় দিয়ে গাড়িতে করে একেবারে কক্সবাজারে পৌঁছানো যাবে। সেই ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আমাদের আছে। এতে করে মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শিল্প বাণিজ্য ও পর্যটন বিকশিত হবে।

বড়লোকদের এলাকায় লোডশেডিং দেবো :
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বানানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে, তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে, এখন এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা, এটা যে আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডি বিত্তশালীদের দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করবো।

২০২৫ থেকে সরকারি কর্মচারীরা পেনশন স্কিমে : ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহার ভুলে যায়নি :
আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহার ভুলে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যে ওয়াদা দিয়ে থাকি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি, তা আমরা পালন করি।

আমরা কারও মুখাপেক্ষী নই :
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। আজকের বাংলাদেশ হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়ার বাংলাদেশ নয়। পর মুখাপেক্ষী না। আমরা ঋণ নিই, তা পরিশোধ করি। উন্নয়নের পরিকল্পনা নিই, তা বাস্তবায়ন করি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করি।

বার বার বাধা এসেছে :
সরকারের চলার পথ বন্ধুর ছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চলার পথ খুব সহজ ছিল না, খুব বন্ধুর ছিল। বার বার এখানে বাধা এসেছে। একটা হচ্ছে দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণভাবে। আবার আন্তর্জাতিকভাবে নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি কমাতে পারবো :
তিনি বলেন, ঋণের চাহিদা, অর্থের জোগান, ব্যাংক আর গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। মুদ্রানীতি, এসব পদক্ষেপকে ফলপ্রসূ করতে রাজস্ব নীতিতে সংকোচন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার প্রতিফলন এ বাজেটে রয়েছে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তার ফল বাজারে দ্রুত পড়বে। আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী হ্রাস করতে পারবো।

কিছু আঁতেল সবকিছুতেই সমালোচনা করেন :
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন, তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণখেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। শুভংকের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করে, তা খুবই দুঃখজনক।

প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি :
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সফলভাবে এ নীতি মেনে চলছি। হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়। সেই নীতি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি। যুদ্ধ, সংঘাতের জন্য নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসেবে। যেকোনও ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে না থাকি, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত, সসৃদ্ধ করেছি, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন করে গড়ে তুলছি।