ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে

2

সম্পাদকীয় স্তবকটি যখন লেখা হচ্ছে, তখন ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে ২০০ মাইল দূরে অবস্থান করছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রবিবার বিকাল ৫ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১০ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরের তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে সাগরদ্বীপ(পশ্চিমবঙ্গ)-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রমের পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম অব্যাহত থাকবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত, (পুনঃ) ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অপরদিকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদসংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, ল²ীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, ল²ীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রামসহ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ও সিলেট বিভাগে দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া ও ভারি থেকে অতি ভারি (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। তবে বনায়নের কারণে সুন্দরবন ও আশপাশ এলাকা হয়ত কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু বনায়ন কম এমন এলাকায় বরিশাল-পটুয়াখালীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। আগে অনেকবার ঝড়-জলোচ্ছ¡াসে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো সুন্দরবন এবারও জানমাল রক্ষা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন সময়ে জন্ম নেওয়া ঝড়-সাইক্লোনে স্থলভাগের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে বরাবরই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের এগিয়ে আসার আগমুহূর্তে আবারও আলোচনায় বাংলাদেশ অংশে ছয় হাজারের বেশি বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। ধারণা করা হচ্ছে, ‘সিডর’, ‘আইলা’, ‘বুলবুল’, ‘আম্পান, ‘ইয়াস, এর মত এবারও সুন্দরবন ‘রেমাল’ রুখে দেবে। তবে আবহাওয়াবিদদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ‘রেমাল’ সরাসরি সুন্দরবনে আঘাত না হানলেও যাত্রাপথে এর ঝাপটা লাগবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালের’ বর্তমান উত্তরমুখী গতিপথ ঠিক থাকলে এটি রোববার সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ১০টার দিকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও ভারতের সাগর দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল উঠে আসতে পারে। এর প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেও সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে পারে তাÐব। রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, “এটাকে প্রায় আইলার সঙ্গে তুলনা করতে পারি, সেইম ক্যটাগরির। আবার কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে কোনো ঘূর্ণিঝড় সিমিলার হবে না।”
তিনি বলেন, “প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর ব্যাসার্ধ ২০০ কিলোমিটার। মানে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে রেমাল পার হওয়ার সময় বামে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা পাবে আর ডানে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী পাচ্ছে। তার প্রত্যাশা, সা¤প্রতিক সময়ের মতো সুন্দরবন এবারও নিজে রক্ষা পাবে, অন্যদেরও ঢাল হবে । ঘূর্ণিঝড় রেমাল সম্পর্কে মোহন কুমার দাশ বলেন, “এটার স্পিড বেশি, আর যদি জোয়ারের সময়ে হিট করে তাহলে খুব ভয়ঙ্কর হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলোচ্ছ¡াসের উচ্চতা বাড়ছে। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় বন্যার অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানেও জলোচ্ছ¡াসের কারণে বন্যা হবে। এই ঘূর্ণিঝড়টা অনেকটা আইলার মতো।” আমরা যতটুকু ধারণা পেয়েছি চট্টগ্রামে রেমালের আঘাত বেশি পড়বেনা। তবে ধানসহ ফসরি ক্ষেতের ক্ষতি হবে। যেহেতু এটি উত্তরমুখী তাই মংলা পায়রা হয়ে স্থলভাগে পশ্চিমবঙ্গে আচঁড়ে পড়বে। এরপরও দক্ষিণের জেলা সাতক্ষিরা, খুলনা, বরিশাল-পাটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। উপকূলীয় এলাকার কয়েকলাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। প্রকৃতপক্ষে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা আজ সোমবার জানা যাবে। আমরা আশা করি, সরকার সেই বিবেচনায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জরুরি ব্যবস্থাসহ কৃষকদের ক্ষতিপূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।