তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : ফখরুল

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

দীর্ঘ বিরতির পর খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামল বিএনপি। গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় শুরু হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ আয়োজনে সমাবেশ। প্রায় আট মাস পর দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর এবং জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা যোগ দেন বলে নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পতন ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে অন্য দলগুলোকেও শামিল হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেছেন, সময় বারবার আসে না। খবর বিডিনিউজের।
ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তাকে বাঁচাতে হলে তাকে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহবান জানাতে চাই, আসুন, আজকে আমরা যেমন ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার’ জন্য সংগ্রাম করছি, যুগপৎ আন্দোলন করছি, আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে একইভাবে একত্রীভূত করে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।
সরকারের পতনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এই সরকার থাকা মানে হচ্ছে আমাদের দেশের ধ্বংস হওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়া, দেশের মানুষ ধ্বংস হওয়া।
তরুণ-যুবকদের কাছে আমার আহবান থাকবে, ‘কেউ আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাকিছে ভবিষ্যৎ’, তোমাদের হাতে কিন্তু নির্ভর করছে এ দেশের ভবিষ্যৎ।
আন্দোলনে সফল হওয়ার সুযোগও দেখছেন ফখরুল। বলেন, আমি বলতে চাই, বার বার সময় আসে না, সুযোগ আসে না, আজকে সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে সেই সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ‘এই ভয়াবহ দানব’, যে আমাদের ‘দেশকে ধ্বংস করছে’, ‘গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে’, ‘স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে’, তাকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর এটিই বিএনপির সবচেয়ে বড় জমায়েত। ফের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডাকা এই কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন উদ্দীপ্ত।
নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা নয়া পল্টনে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তাদের ভিড় কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত ছাড়ায়।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে জমায়েতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিল খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। কারো কারো হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিতের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরে প্রতিবার মেয়াদ বাড়িয়ে যাচ্ছে সরকার।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এই চার বছরে বিএনপি নেত্রী বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন।
গত ২৩ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর পর তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। গত ২৬ জুন ঘোষণা হয় তিন দিনের কর্মসূচি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, ‘দেশনেত্রীকে’ মুক্তি দিন। অন্যথায় আপনাদের যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশের স্বাস্থ্য বিলিয়ে দেওয়ার অভিযোগও করা হল বিএনপির সমাবেশ থেকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতে সঙ্গে চুক্তি করেছে, দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা, পানি বিশেষজ্ঞ বলছেন এটা বাংলাদেশ বিরোধী, বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী। আমরা পানি চাই, আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা চাই, আমরা সীমান্তে হত্যা বন্ধ চাই, আমার যেসব সমস্যা আছে তার সমাধান চাই। তা না করে এই সরকার সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একটা ব্যানারে দেখলাম, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ থাকবে। কথাটা ঠিক। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, আজকে পুরো জাতি অসুস্থ হয়ে গেছে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে যে কোনো মূল্যে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির স্বার্থে কোনো আপোষ কারও সঙ্গে হবে না।