সারাদেশে তরুণ ও যুবকদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। তারা অভিভাবক ও দেশের জন্য বোঝা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৮৮ হাজার তরুণ ‘কিছুতেই নেই’ তারা পড়ালেখায়ও নেই, কোন কাজেও নেই জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত, চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধকর্মে লিপ্ত। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে যানা যায়- জনশুমারি ও গৃহগণনা- ২০২২ এর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি অনুসারে পড়ালেখা, চাকরি, পারিবারিক কিংবা অর্থনৈতিক কোন ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত নন চট্টগ্রামের সাড়ে ৫ লাখ তরুণ। এদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে দেড় লাখের বেশি বসবাস করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায়। তারা মাদকাসক্ত, চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধ কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়ছে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘সময়োপযোগী শিক্ষার অভাব, ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং কর্মসংস্থানের অভাবে বিপথে চলে যাচ্ছেন তারা। এ বিশাল তরুণগোষ্ঠীর কাজ থেকে দূরে থাকা সমাজের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করা না গেলে ভবিষ্যতে সামাজিক পরিবেশ চরম খারাপ হয়ে যেতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চট্টগ্রাম জেলার জনশুমারি ও গৃহগণনা- ২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রামের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩১০ জন জনসংখ্যা কিছুই করে না। এর মধে ছেলের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৯২৬ জন এবং মেয়ের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৪ জন। আবার তাদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এ সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৩১ জন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮২৭ জনের বাস। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ১২৮ জন।
এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ এলাকায়। এ জনসংখ্যার ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৪ জন গ্রামে বসবাস করে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফটিকছড়ি এবং কম কর্ণফুলীতে। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে ৫০ হাজার ৫৭৯ জন। ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার ৪২৭ জন। কর্ণফুলী উপজেলায় ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৮ হাজার ৯২৮ জন। আনোয়ারা উপজেলায় ১৯ হাজার ৭১৯ জন, বাঁশখালী উপজেলায় ৩৭ হাজার ৯৫৫ জন, বোয়ালখালী উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৯৫ জন, চন্দনাইশ উপজেলায় ১৬ হাজার ৬২৮ জন, হাটহাজারী উপজেলায় ৩৩ হাজার ৮৪২ জন, লোহাগড়া উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৪৩ জন, মিরসরাই উপজেলায় ৩৩ হাজার ৪১০ জন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ২৯ হাজার ৫১১ জন, রাউজান উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৪৫ জন, স›দ্বীপ উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৫২ জন, সাতকানিয়া উপজেলায় ৩১ হাজার ৫১৭ জন এবং সীতাকুÐ উপজেলায় ৩০ হাজার ৯২৫ জন বসবাস করে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ প্রজন্মের বেশিরভাগ তরুণ মোবাইল ফোনে আসক্ত। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিচর্চাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাÐ থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে বিভিন্ন রাজতৈনিক নেতার আশ্রয়ে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়েন তারা। পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে সাইবার অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। গ্রামীণ এলাকায় তরুণদের নিষিদ্ধ মোবাইল গেমে আসক্তি বাড়ছে। একথা সত্য যে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী ‘কিছুতেই নেই’ এটি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সামাজিক গতিশীলতা আক্রান্ত হয়। বিশাল সংখ্যক মাদকাসক্ত, কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা, খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকাÐে সম্পৃক্ত করতে হবে তাদের। বিশেষ করে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তরুণরা সম্পদে পরিণত হবে। এব্যাপারে অভিভাবকদের অধিকতর নজরদারির বিকল্প নেই। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিক ভাবে তৎপর হলে সমাজের এই বিষফোঁড়া দূর করা সম্ভব।
অধিকাংশ তরুণ-যুবক পড়ালেখা বা কাজের মধ্যে নেই। আবার অনেকে আছে যারা সহপাঠী, পাড়া-মহল্লার বড় ভাই কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তির প্ররোচনায় পড়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বখাটে কর্মকাÐের জন্য তাদের অভিভাবকদের সহায়তায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
