তবুও নির্বাচনী লড়াইয়ে অনড় বাইডেন

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে জো বাইডেনের ওপর চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নেটো সম্মেলন শেষের সংবাদ সম্মেলনের দিকে নজর ছিল সবার।
এই সংবাদ সম্মেলন ছিল বাইডেনের জন্য নিজের বয়স নিয়ে উদ্বেগ দূরে করে শারিরীক ও মানসিক সক্ষমতা প্রমাণের এক অগ্নিপরীক্ষা। আর সেই মঞ্চেই একের পর এক ভুল করে তার অবস্থা হল লেজেগোবরে।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে গুলিয়ে ফেলেন অশীতিপর এই প্রেসিডেন্ট।জেলেনস্কিকে মুখ ফসকে ‘পুতিন’ সম্বোধন করেন বাইডেন। আর শুধু তাই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান নেতা ডনাল্ড ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও বানিয়ে বসলেন। সংবাদ সম্মেলনে কমলা হ্যারিস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার নামের জায়গায় ‘ট্রাম্প’ বলে ফেলেন বাইডেন।
কিন্তু এতো ভুলের পরও বাইডেন নির্বাচনি লড়াইয়ে থাকার ব্যাপারে অনড় অবস্থান প্রকাশ করেছেন। বয়স নিয়ে উদ্বেগ উপেক্ষা করে দৃঢ়তার সঙ্গেই বাইডেন বলেছেন, তিনি নির্বাচনে লড়বেন। নিজেকে সুস্থ দাবি করে বাইডেন বলেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য তিনিই সেরা প্রার্থী।
বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর ৭৫তম সম্মেলন শেষে একক সংবাদ সম্মেলন করেন বাইডেন। এক ঘণ্টার এ সংবাদ সম্মেলনে তার রাজনৈতিক জীবন, পুননির্বাচিত হওয়ার আশা, প্রেসিডেন্সি, পররাষ্ট্রনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যু ও গাজার যুদ্ধসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। খবর বিডিনিউজের
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ২৩ জন নেতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট ইউক্রেইন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছিলেন বাইডেন। ইউক্রেইনকে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে তিনি কথা বলেন। এরপরই বক্তব্য রাখার জন্য ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ডাকার সময় বাইডেন ভুল করে তাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘পুতিন’ নামে ডাকেন।
বাইডেনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এবার মঞ্চ ছেড়ে দিতে চাই ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে। যার আছে সাহস, আছে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা। ভদ্রমহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ, আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে স্বাগত জানাচ্ছি’। অবশ্য পরক্ষণেই নিজেকে শুধরে নেন বাইডেন। বলেন, ‘জেলেনস্কি পুতিনকে হারাবেন’।
এর পরেও বাইডেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও এক বার মুখ ফস্কান। তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করতামই না, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য না হতেন’।
বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ওপর তার আস্থা আছে কি না। এর জবাব দিতে গিয়ে বাইডেন ওই ভুল করেন।
স্বভাবতই বাইডেনের শারীরিক সক্ষমতা, বয়স নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে এর আগে টিভিতে প্রথম নির্বাচনি বিতর্কে শোচনীয় পরাজয়ের পরই বাইডেন ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।
বিতর্কে বাইডেনের কাঁপা-কাঁপা গলা, বক্তব্যের খেই হারিয়ে ফেলা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেই। এমনকি প্রার্থী বদল করার প্রস্তাবও আসে। বাইডেনকে সরে যাওয়ার আহ্বানও আসে।
তবে বাইডেন তখন থেকেই বলে আসছেন, তিনি শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তিনি নির্বাচনে লড়বেন এবং ট্রাম্পকে হারাবেন।
এবার গত বৃহস্পতিবারের নেটো সংবাদ সম্মেলনের পর আরও বেশ কিছু ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বাইডেন এখনও অনড়। নিজেকে স্নায়বিকভাবে সুস্থ দাবি করে তিনি বলেন, তার কোনো মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কারণ, তিনি যদি দুই বা সাতজন চিকিৎসকও দেখান তারপরও তার সমালোচকরা সন্তুষ্ট হবেন না।
নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন সে আত্মবিশ্বাস আছে বলে আবারও জানান তিনি। বাইডেন বলেন, স্টাফরা যদি তাকে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত দিতে পারে যে তিনি নির্বাচনে জিতবেন না, তাহলে তিনি সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু জরিপে এখনও তেমন আভাস পাওয়া যায়নি বলে বাইডেন উল্লেখ করেন।