ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ ৪ ঘণ্টা অচল

8

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

সীতাকুন্ডের কুমিরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি) শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ৪ ঘণ্টা অচল ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনকারীরাই গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে কুমিরা রেলওয়ে স্টেশন ও পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইআইইউসির সামনে এই আন্দোলন শুরু করে। ক্লাস বর্জন করে শত শত শিক্ষার্থী মহাসড়ক ও রেললাইনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন শুরু করে। সেখানে তারা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। এতে করে আটকা পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখি লাইনের শত শত যানবাহন। ভ্যাপসা গরমে চরম দূভোগে পড়েন যানবাহনে থাকা হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দূভোগ অসহ্য আকার ধারণ করে।
প্রথমে আন্দোলনকারিরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের কুমিরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেন আটকিয়ে দেয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেওয়ার পর সেখান থেকে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইআইইউসি গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এরপর আইন-শৃঙ্গলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারিদের বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ পায় আইন-শৃঙ্গলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য এস.এম আল মামুন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনামতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কে.এম রফিকুল ইসলাম,সহকারি কমিশনার ভূমি মো. আলাউদ্দিন ও সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন (পিপিএম)আন্দোলনকারি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দুপুর ২টা ৩০মিনিটের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ থেকে সরে পড়েন। এরপর ধীরে ধীরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
সীতাকুন্ডের বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ইনচার্জ খোকন চন্দ্র ঘোষ বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামা আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুরুতেই রেলপথ অবরোধ করেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয় গেইট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চট্টগ্রামমুখি সড়ক অবরোধ করেন। এতে চট্টগ্রামমুখী সড়কে আটকা পড়েন দূরপাল্লার শত শত যানবাহন। মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী সড়ক অবরোধের ঘন্টাখানিক পর শিক্ষার্থীরা ঢাকামুখি সড়কে অবস্থান নেয়। এতে ঢাকামুখী সড়কে দূরপাল্লার শত শত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর দুপুর ২টার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শিক্ষকসহ পুনরায় বুঝিয়ে শান্ত করলে আন্দোলনকারিরা মহাসড়ক থেকে সরে পড়েন। ধীরে ধীরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন (পিপিএম) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ছাত্ররা ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী দুটি লাইনে লাঠি-সোটা নিয়ে অবরোধ করে। এছাড়া কিছু ছাত্র রেললাইনেও অবরোধ করে। কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামা আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় কিছু উত্তেজিত আন্দোলনকারিরা মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করে। যার ফলে মহাসড়কে দূরপাল্লার শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে আমরা মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম রফিকুল ইসলাম বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামা আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে দীর্ঘসময় তাদের বুঝিয়ে শান্ত করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অবরোধের চার ঘন্টা পর তারা মহাসড়ক থেকে সরে যায়। ফলে চট্টগ্রাম ও ঢাকামুখী সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি আটকা পড়া দূরপাল্লার শত শত যানবাহন তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিক্ষোভে মহাসড়কে যানজট ছাড়া কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”