টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ, আগুনের কুন্ডলী

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের জেরে দিনভর এপারে বিকট শব্দ শোনা গেছে এবং আগুনের কুন্ডলী দেখা গেছে।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সারাদিন শান্ত থাকলেও শনিবার থেকে তা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। আজ (রোববার) দিনভর বিরতিহীন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওপারে কী হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত, টানা বোমায় আর আগুনে এলাকার পর এলাকা বিধ্বস্ত হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
টেকনাফের জালিয়াপাড়ার উল্টোপাশে মংডুর সুধাপাড়া গ্রামের আশপাশের পাঁচ-ছয়টি পয়েন্ট থেকে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাত ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউন শিপে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। শুক্রবার সারাদিন কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিকট শব্দ অব্যাহত রয়েছে গতকাল বিকাল পর্যন্ত।
সীমান্তের ওপারে থাকা আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের কাছ থেকে পাওয়া খবরের বরাতে টেকনাফের প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, মংডু শহরের আশপাশে ফয়েজিপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, সুধাপাড়া গ্রাম ছাড়া সব জায়গায় বিদ্রোহীরা দখল নিয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার বিদ্রোহীরা শাহপরীর দ্বীপের বিপরীতে বিজিপির ফাতংজা চৌকিটি দখল করে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ অবস্থায় মিয়ানমারের বিজিপি ছাড়াও রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে। তবে অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে সেজন্য বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের টহল জোরদার রয়েছে।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা সৈয়দ হোছাইন বলেন, রাতভর সীমান্তজুড়ে বিকট গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এতে এখানকার বসবাসকারী মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। এ ছাড়া সকাল থেকে সীমান্তের ওপাড়ে আগুন জ্বলছে। এভাবে চলতে থাকলে আবার রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে।
গোলার বিকট শব্দের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আবার দুই দিন ধরে সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া নাফ নদীর ওপারে আগুন দেখা গেছে।
এভাবে নাফ নদী হয়ে নৌকায় করে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় আসা কয়েকটি ট্রলার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করলেও এ ব্যাপারে বিজিবি বা কোস্ট গার্ডের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন এবং কোস্ট গার্ড টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা তা রিসিভ করেননি।
তবে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা ও বিজিপির সদস্য নাফ নদীতে ট্রলারসহ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তবে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি।
তারপরও সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
মিয়ানমারের মংডুর সুধাপাড়া গ্রামে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
দুইবারে চারটি ট্রলারে এমন অনুপ্রবেশের চেষ্টা দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তারা এপার থেকে মোবাইলে সেই ভিডিও ধারণ করেছেন। ট্রলারগুলোকে মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের দিকে যেতে দেখেছেন তারা।