ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি

15

রশীদ এনাম

খুব কঠিন সময় আমরা পার করছি। মানুষের মায়া-মমতা, ভালোবাসার বন্ধন, আদর-স্নেহ একে অপরকে সম্মান করা, সম্প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিলীনের পথে। মানুষ কি আজ সত্যি রঙিন ফানুসে পরিণত হলো। জীবনে খারাপ সময় আসলে ভালো মানুষও চেনা যায়, আবার খারাপ মানুষও চেনা যায়। কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘একটা মানুষের মধ্যেই গোঁজামিল থাকে। কিন্তু যে সাপ সে হান্ড্রেড পারসেন্ট সাপ। যে শিয়াল সে হান্ড্রেড পারসেন্ট শিয়াল। মানুষ সাপও হইতে পারে, শেয়ালও হইতে পারে, পাখিও হইতে পারে। মানুষেরই বিভিন্ন চরিত্র নেয়ার ক্ষমতা আছে। বুঝছো গ্রাম দেশে আগে সাপ আর শেয়াল পাওয়া যাইতো এগুলো নাই এখন। কারন সাপ, শেয়াল এরা মানুষ হিসাবে জন্মাইতে আরম্ভ করেছে’। নির্বাচন আসলে দেখি গ্রামেগঞ্জে জেলায় উপজেলায় সংঘাত-সহিংসতা, মারামারি হানাহানি, নির্যাতন, বিষোদাগার, কাদা ছোড়াছোড়ি ছড়িয়ে পড়েছে। নিজ পরিবারে চাচা-ভাতিজা, ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ, পাড়ায় পাড়ায় বিরোধ ধারাবাহিকভাবে চলছে এই সার্কাস। কে জানে কখন বন্ধ হবে এই প্রতিহিংসা নামক খেলা।
গ্রামে একসময় দেখেছি মোড়ল শ্রেনীর অ-ভদ্র লোকজন, কিছু জ্ঞান পাপী প্রতিনিয়ত গ্রাম্য রাজনীতি করে তৃপ্তি পাই। মাঝে মাঝে পরিধানের লুঙ্গি উপরে তুলে আঙ্গুল না হয় পানের বটুতে চুন লাগিয়ে মুখ লাল করে পানের পিক ফেলে। আজ এর সাথে, তো কাল ওর সাথে ঝগড়া বেঁধে দিয়ে মজা নে। এতে যে কি আনন্দ আছে সেটা মোড়লরা ভালো জানে। অনেকে দু পক্ষকে ডেকে পয়সা নিয়ে গ্রাম্য বিচার-সালিশের নামে নাটকও করেন। চোরকে বলে চুরি কর, মালিককে বলে সজাগ থাকো। জমি-জায়গা, পুকুরের অংশনামা, মুনশি দিনের সম্পত্তি, সীমানা প্রাচীর, জমির আইল, ফসল, পানি, রাস্তা, নালা নর্দমা, ময়লা আবর্জনা, নামকরণ এসব নিয়ে সহিংশতা বিরোধ লেগেই আছে। গাছের আম পাড়া নিয়েও খুন হতে দেখেছি, সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে সন্তানের হাতে গর্ভধারীনি মাকে খুন হতে দেখেছি। বন্ধু আশুতোষ সুজন গোষ্ঠি গোষ্ঠি কিলাকিলি নিয়ে সুন্দর একটা নাটক বানিয়েছিলেন। কবি বোধহয় এ জন্য বলেছিলেন, আমরা যেন সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। আসলে আমরা বাঘ কুমিরের মুখ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ। একদিকে কুমির টেনেছিল অপরদিকে সঙ্গি-সাথী এবং ভাইয়েরা টেনে ক্দ্দুুসের জীবন বাঁচিয়েছেন। বাঘ-কুমিরের মুখ থেকে রক্ষা পাওয়া সাতক্ষীরা বনজীবি আবদুল ক্দ্দুুস (৫৫) সত্যি ঘটনা যেনে অবাকা হয়েছি।
চট্টগ্রামে মানুষের ক্ষতি ও বড়ো ক্ষতি হওয়ার কথা ভেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করে চীরতরে চলে গেলেন বীমানবাহিনীর তরুণ মেধাবী পাইলট আসিম যাওয়াদ, আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের বাঁচাতে ফারাজ নিজে উৎসর্গ হওয়ার কথা মনে আছে। জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে এভারেস্ট জয় করলেন আঁরার চট্টগ্রামের বাবর আলী। আমরা অন্যয়ের কাছে মাথানত করতে শিখিনি।
নাট্যমঞ্চের পৃথিবীটা দুদিনের টাইম ফ্লাওয়ারের মতো। সকালে ফুটে বিকেলে বিলীন হয়ে যায়। সাদা একটুকরো কাপড়, সাড়ে তিন হাত মাটি শেষের ঠিকানা। তাও সৃষ্টিকর্তা বরাদ্দ করলে পাবেন।
পৃথিবীটা ক্ষণিক সময়ের বিচরণভূমি মাত্র আমরা ভুলে যায়। জীবনটা সমুদ্রের পানে উড়ে যাওয়া গাংচিলের মতো এই এলো বুঝি এই গেলো। মৃত্যুর কথা চিন্তা করলে মানুষ এতো অন্যায় পাপাচার বোধহয় করত না।
বিভিন্ন জেলা উপজেলায় চলছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। আহত-নিহতও হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রশ্ন হলো কেনো ? দু চারটা বছরের জন্য একটা চেয়ারে বসার জন্য এতো লোভ কেন ? এসব তো আগে ছিল না। একসময় জনপ্রতিনিধি হতো সমাজের সবচেয়ে সম্মানি বিনয়ী শিক্ষিত ব্যক্তি। কিংবা যাদের সামাজিক মর্যাদা আছে তাঁদের কে জনগন ভোট দিয়ে নির্বাচন করতো। উৎসব মুখর পরিবেশে সবাই ভোট দিত। এখন সবকিছু কেন জানি বদলে গেছে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য সবাই লাঠালাঠিতে নেমেছে। একটা দেশে কিংবা একটা সমাজে সহিংসতা দ্বারা ভালো কিছু আসে না।
যার সাথে বিরোধীতা করছেন সেও হতে পরে আপনার অন্তিম যাত্রার খাটিয়া কাঁদে বহন করার বাহক। সবার আগে সে আপন মানুষটি খাটিয়া কাঁধে নিবে কিংবা শ^শানে গিয়ে দাহ করতে এগিয়ে আসবে। বিপদে সবার আগে কাছের মানুষরাই ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেন। লোক সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত ফিরোজ সাঁই-র গানের কথাটা খুব মনে পড়ছে আজ, ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা বন্ধ হবে রং তামাশা চক্ষু মুদিলে হাইরে দম ফুরাইলে, মহামারির সময়ে ভাই ক্ষমা চাওয়ার সময়ও কিন্তু থাকবে না’। আসুন শত্রæতা নয় মায়া ছড়িয়ে বন্ধুতার হাত বাড়াই। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়াই। ভালো মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহিন প্রপাকাÐ নয়, কট‚বাক্যে নয়, ভালোবাসা দিয়ে জয় করি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বপালন করবে দেশের সরকারি ইশকুল কলেজের শিক্ষক ও সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা। ওদের জানমালের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে সবার আগে। সশস্ত্র পুলিশ প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইলটিম, স্ট্রাইকিং টিম এবং মিডিয়া কর্মীরা সজাগ থাকবে প্রয়োজনে নিরাপত্তার জোরদার করতে যত নিরাপত্তার বেষ্টনি দেয়া যেতে পারে। এটা নিশ্চিত করলে নির্বাচন কেন্দ্র মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে আগ্রহী হবে।
নির্বাচনের প্রার্থী যে হোক না কেন জয়-পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতার সংস্কৃতি চালু রাখতে হবে। খেলার মাঠে কিংবা পরিক্ষার হলে অনেকে পরীক্ষা দেন কেউ এ প্লাস পাই কেউ এ মাইনাস পাই কেউ আবার অকৃতকার্য হয়, খেলার মাঠে কেউ জিতে কেউ বা হারে এটাই দুনিয়ার রীতি। বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত প্রার্থী অবশ্যই ফুল এবং মিষ্টি মুখ করাবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে একে অপরকে উপহার দিবে। জয়ী প্রার্থী হেরে যাওয়া প্রার্থীকে বুকে জড়িয়ে নিবে এই সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সেটা দেখতে চাই। সবকিছু নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে চলার পথে জয় পরাজয় দুটাই থাকবে। একটি কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে হেরে যাওয়া নয়। আপনি নিজের সাথে আয়নাবাজী করুন নিজের সমালোচনা, নিজের দোষ, ভুল, ব্যর্থ হওয়ার কারন গুলো নিরীক্ষকের মতো খুঁজে বের করুন দেখবেন মনে প্রশান্তি অনুভব করবেন। পাছে লোকে কিছু বলে এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়্ েআসতে হবে। জীবন চলার পথে মাঝে মাঝে ব্যর্থতা এবং হেরে যাওয়া শ্রেয়। আগামীতে নতুন উদ্যমে সঠিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা নিলে এই শিক্ষাই আপনার আগামীতে জয়ের পথ সুগম করবে।
আপনার ভোট আপনি দিবেন যাকে খুশি তাঁকে দিবেন অবশ্যই দেখে শুনে যোগ্য ব্যক্তিকে দিবেন। যেখানে সংঘাত-সহিংসতা, অপরাজনীতি, মারামারি, হানাহানি, ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি দেখবেন প্রশাসনের সহায়তা ও তরুণ সমাজ নিয়ে রুখে দিন। মাগো ভাবনা কেন আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে। আমরা আলোর মতো ছুটতে শিখেছি নতুন ভোর ইনশাআল্লাহ আসবে। সহিংশতা নয় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। জয়-পরাজয় প্রার্থী উভয়ে একে অপরের প্রতি এক চিলতে ভালোবাসা বিনিময়ে হোক আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট