জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা

3

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। গতকাল শনিবার রাত ৯ টায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনলাইনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, ফায়ার সার্ভিস, আনসারসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা, উপকূলবর্তী উপজেলাসমূহের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা।
সভায় জেলা প্রশাসক ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিশেষ করে সন্দীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’র প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় উপক‚লবর্তী এলাকারসমূহ ও পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
এসময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার, মোমবাতি, ঔষধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুদ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও ১১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কিল্লা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম কর্তৃক ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, ৯টি আর্বান ডিসপেন্সারিতে ৯টি এবং ৫টি জেনারেল হাসপাতালে ৫টিসহ মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন মজুদ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান আশ্রয় কেন্দ্র ও কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রদান করা হয়েছে।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জেলা পরিষদের সকল জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় অবস্থান করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে উপজেলাসমূহে অবস্থিত ডাকবাংলো ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে।
এ সময় জেলা প্রশাসক মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
জেলা আনসার কমান্ডেন্ট জানান, প্রতিটি গ্রামে আনসার প্লাটুন দুর্যোগ প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, সমস্ত মাছ ধরার নৌকা ইতোমধ্যে তীরে চলে এসেছে। কোনো জেলে যেন সমুদ্রে মাছ ধরতে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।
সন্দীপ উপজেলার ইউএনও জানান, সেখানে ১৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে এবং জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি সিপিপি এর ৮ হাজার ৮৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট এর ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও বিএনসিসি ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে যার নম্বর- ০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫। বিজ্ঞপ্তি