জেন-জি কিশোরেরা যে ধরনের পোশাক পরছে এখন

3

জাহিদুল হক

এ সময়ের কিশোর বা নব্য তরুণেরাই মূলত জেন-জি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে পুরো বিশ্বের জেন-জি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। জেন-জিদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, তারা কোনো নির্দিষ্ট স্টাইলে আটকে থাকে না। আবার বিভিন্ন সময়ের স্টাইল ফিরিয়ে আনতেও তারা কোনো কার্পণ্য করে না।
এর মধ্যে আশি ও নব্বইয়ের দশকের ফ্যাশনধারাই এবার ফিরেছে সবচেয়ে বেশি। পোশাক, জুতা, অনুষঙ্গ—সবকিছুতেই দেখা যাচ্ছে সে সময়ের প্রভাব। এই তালিকায় রয়েছে নব্বই দশকের ব্যাগেট হ্যান্ডব্যাগ, প্ল্যাটফর্ম শু, স্লিপ ড্রেস, ডেনিম অন ডেনিম, ওভারঅল। এ ছাড়া আশির দশকের বাইকার শর্টস, লাউঞ্জওয়্যারের বর্তমান সংস্করণ কম্ফি বা আরামদায়ক ফ্যাশন, টার্টলনেক ও কিউবান কলার শার্ট। ফিউশন, ইউনিসেক্স কিংবা কিছুটা ওল্ড স্কুল ফ্যাশনও এখন জেন-জি ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত।
মিনিমাল, লিঙ্গনিরপেক্ষ, অতিরিক্ত বড় ও আরামদায়ক-এ সময়ের কিশোরদের স্টাইলের সঙ্গে এই শব্দগুলোও জড়িয়ে আছে। পাশাপাশি জেন-জিরা নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতেও আগ্রহী। শুধু ব্র্যান্ডের সুন্দর কিছু পোশাক গায়ে জড়ালেই ফ্যাশনেবল হওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আর অভিব্যক্তির সঠিক প্রকাশ। জেন-জিদের এমন ধারণাই বদলে দিয়েছে ফ্যাশনের অনেক ধরাবাঁধা নিয়ম।
এ বিষয়ে ফ্যাশন উদ্যোগ ব্রোকের প্রতিষ্ঠাতা মাহেনাজ চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, এ সময়ের জেন-জি বা কিশোর-তরুণেরা ভীষণভাবে পরিবেশ সচেতন। তারা ফাস্ট ফ্যাশনবিমুখ। তাদের এই ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে ব্রোকও সংগ্রহ তৈরির সময় কার্যকর পোশাককে প্রাধান্য দেয়। এ ধরনের পোশাকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, নানা সময় নানাভাবে পরা যায়। একটি পোশাককে যখন বিভিন্নভাবে পরা যায়, তখন আলমারিতে অনেক বেশি কাপড় না থাকলেও চলে; অর্থাৎ ফ্যাশন বর্জ্য কম তৈরি হবে, বাঁচবে পরিবেশ।’
বিজনেস অব ফ্যাশনের এক সমীক্ষায় বলা হয়, একসময় পোশাকে রং ব্যবহারে নানা ধরনের বাধ্যবাধকতা দেখা যেত। জেন-জিদের প্রভাবে এই ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে বেরিয়ে এসেছেন ডিজাইনাররা। রঙের ব্যবহারে এখন মানা হয় না কোনো নিয়ম। যেমন গোলাপি একসময় শুধু মেয়েদের রং হিসেবে পরিচিত ছিল।
এখন মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের শার্ট, টি-শার্ট থেকে শুরু করে চুলেও দেখা যাচ্ছে গোলাপি। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অর্জন লিঙ্গনিরপেক্ষ পোশাক। কয়েক দশক আগেও বিষয়টি চিন্তার বাইরে ছিল। একুশ শতকে এসে জেন-জিরাই প্রমাণ করেছে, পোশাকও লিঙ্গনিরপেক্ষ হতে পারে। এ ধরনের পোশাকই এখন ট্রেন্ডি।
ফটোশুট চলাকালে তিন মডেলকেই জিজ্ঞাসা করা হলো, ওরা এ সময় কোন ধারায় নিজেদের সাজাচ্ছে। জানাল, কোরিয়ার চলতি ধারা তো আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিল। এখনো আছে। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক পোশাককে অনানুষ্ঠানিকভাবে পরার ইতালীয় ধারাও এখন বেশ চলছে, অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক নকশার শার্টকে হাফপ্যান্টের সঙ্গে পরতে হবে। পায়ে থাকতে পারে কেডস অথবা লোফার।
লিঙ্গনিরপেক্ষ ধারা নিয়ে বেশ বড় পরিসরে কাজ করেছে অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড গরুর ঘাস। ব্র্যান্ডটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম শাহতাব বলেন, ‘আমরা মূলত মিনিমাল ও জেন-জিদের পছন্দকে কেন্দ্র করে পোশাক তৈরি করি।’ এ জন্য লিঙ্গনিরপেক্ষ পোশাকের পাশাপাশি ওভারসাইজ বা অতিরিক্ত বড় আকারের পোশাক, আরামদায়ক পোশাক অনেক ফ্যাশন হাউসের সংগ্রহে প্রাধান্য পেয়েছে এবার। এ সময়ের কিশোরেরা বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি থেকেও ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত। যেমন কিমোনো পোশাকটি গরুর ঘাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পোশাক বলা যায়।