জেন-জির ব্যবহৃত শব্দের অর্থ জানেন তো?

4

হ মৃণাল সাহা হ

ভাষা বহতা নদীর মতো, সদা পরিবর্তনশীল। ভাষা বিবর্তিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, মুখে মুখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একেক ভাষায় যুক্ত হয় নতুন নতুন শব্দ, বদলে যায় উচ্চারণ কিংবা প্রয়োগ। বর্তমান তরুণ সমাজ, অর্থাৎ জেন-জির (জেনারেশন জেড বা জুমারস, যাঁদের বয়স ১১ থেকে ২৬, অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম) শব্দভান্ডারেও এসেছে পরিবর্তন। নিত্যদিনের কথোপকথন, লেখা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করছেন, যার অর্থ পুরোনো প্রজন্মের পক্ষে বোঝা মুশকিল। তবে জেন-জিকে বুঝতে চাইলে তাঁদের শব্দগুলোও তো বোঝা চাই। তাই জেনে রাখুন জেন-জির মুখে মুখে ফেরা কিছু শব্দের অর্থ।
অরা (Aura): ব্যক্তিত্বের পরিমাপক। একজন কতটা ‘কুল’ বা ইতিবাচক কিংবা কতটা ‘আনকুল’ বা নেতিবাচক, তা পরিমাপ করা হয় এই শব্দ দিয়ে। ‘অরা গেইন’ ব্যবহৃত হয় ইতিবাচক অর্থে এবং ‘অরা লস’ নেতিবাচক অর্থে। উদাহরণ: ও কি কাজটা করে অরা লস করল না?

বেইজড (Based): প্রকৃত অর্থে ‘অন্যে কীভাবে দেখল, তা তোয়াক্কা না করে নিজের অবস্থানে অবিচল থাকা’। তবে শব্দটি এখন ব্যবহৃত হয় কোনো মতামত বা কোনো কিছুতে একমত পোষণ করার ক্ষেত্রে। বিশেষত যেকোনো বিতর্কিত বিষয়ের বেলায় শব্দটি জুতসই। উদাহরণ: তোমার মতামত বেইজড।

ব্রাহ্ (Bruh): শব্দটি ব্যবহার করা হয় কারও কিংবা কোনো কিছুর প্রতি শক, হতাশা কিংবা বিব্রতবোধ বোঝাতে। এটি মূলত ইংরেজি ‘ব্রাদার’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। উদাহরণ: এইটা কী করলা, ব্রাহ!

বাসিন (Bussin): খুব ভালো। কোনো কিছুকে খুব ভালো বোঝাতে বলা হয় ‘বাসিন’। রান্নার প্রশংসা করতেও শব্দটির চল আছে। উদাহরণ: সালাদটা যা হয়েছে না! বাসিন!

ক্যাপ (Cap): মিথ্যা। কেউ মিথ্যা বলছে, তা ধরতে পারলে ক্যাপ/ক্যাপিং বলে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। সত্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয় এর উল্টো, অর্থাৎ ‘নো ক্যাপ’। শব্দটির উৎপত্তি ১৯০৬ সালে প্রকাশিত মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক আলফ্রেড হেনরি লুইসের ‘কনফেশনস অব আ ডিটেকটিভ’ বইয়ে। ২০১৭ সালে এটি জনপ্রিয়তা পায়। উদাহরণ: ১. কনসার্টের টিকিট তো ঠিকই পাইছিস, ইউ আর ক্যাপিং! উদাহরণ: আজকের মধ্যে কাজটা শেষ করবই। নো ক্যাপ!

কুক (Cook): কোনো ফলাফলের অভিপ্রায়ে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেওয়া, যাতে অন্য পক্ষ বিব্রত বা অস্বস্তিবোধ করে। সবচেয়ে পরিচিত বাক্য হলো ‘লেট হিম কুক’। অর্থাৎ সে এমন পরিস্থিতি তৈরি করুক, পরে যাতে বিব্রত বোধ করে। উদাহরণ: অপেক্ষা করো, দেখি কী করে। লেট হিম কুক।

ডেলুলু (Delul): ইংরেজি ‘ডিলিউশনাল’ শব্দটির বিবর্তিত রূপ। উৎপত্তি মূলত কে–পপ সংস্কৃতি থেকে। শব্দটি ব্যবহার করা হয় অসম্ভব বা আকাশকুসুম মনোভাব বোঝাতে। বিশেষত কোনো সম্পর্কের বেলায় কারও আকাশকুসুম প্রত্যাশাকে বলে ডেলুলু। শব্দটি জনপ্রিয় হয়েছে টিকটকে ‘ডেলুলু ইজ দ্য সোলুলু’ বাক্যাংশটি ভাইরাল হওয়ার পর। বাক্যাংশটির অর্থ ‘আত্মবিশ্বাসেই সব সমাধান’। এখানে ‘সোলুলু’ এসেছে ইংরেজি ‘সলিউশন’ শব্দ থেকে। উদাহরণ: ইউ আর সো ডেলুলু।

ড্রিপ (Drip): ট্রেন্ডি এবং উচ্চশ্রেণির ফ্যাশন বোঝাতে ব্যবহার করা হয় শব্দটি। ‘কুল’ শব্দের বিকল্প হিসেবেও ড্রিপ ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: কুল ড্রিপ! কোত্থেকে কিনেছ এটা?
এরা (Era): কোনো ব্যক্তির বর্তমান আগ্রহ বা অগ্রাধিকার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ধরা যাক, কেউ স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছেন, তখন তিনি নিজেকে নিজের ফিটনেস এরায় আছেন বলে দাবি করতে পারেন। উদাহরণ: সাবধান! আমি কিন্তু এখন আমার ভিলেন এরায় আছি।

ফ্লেক্স (Flex): সোজা বাংলায় ভাব দেখানো। এই ভাব দেখানো হতে পারে যেকোনো বিষয়ে। হতে পারে নিজের অর্জন, গুণ কিংবা প্রভাবপ্রতিপত্তি নিয়ে। অর্থাৎ নিজের কর্মকান্ডের উৎকৃষ্টতার প্রকাশকে ফ্লেক্স হিসেবে গণ্য করা চলে। উদাহরণ: ফ্লেক্স করছি না, এবার টেস্টে ৯৮ পেয়েছি!

গ্লো আপ (Glow-Up): বিশেষ উন্নতি অর্থে। কারও বড় কোনো উন্নতি দেখলে সেটিকে ইঙ্গিত করে ‘গ্লো আপ’ ব্যবহৃত হয়। সেই উন্নতি হতে পারে পোশাক-পরিচ্ছদ, আত্মবিশ্বাস কিংবা স্টাইলে। এর উল্টো হলে ব্যবহার করা হয় ‘গ্লো ডাউন’। উদাহরণ: ওদের গ্লো-আপে তো আমি মুগ্ধ!

গোট (GOAT): এটি মূলত ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ (Greatest of all Time) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বাংলায় যাকে বলে ‘সর্বকালের সেরা’। উদাহরণ: কী বললা? রোনালদো? ভাই, যত যা-ই বলো, মেসিই কিন্তু গোট!

আই ওয়াই কে ওয়াই কে (Iykyk): এটি ‘ইফ ইউ নো, ইউ নো’ (If you know, you know) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কোনো একটি বিষয়ে কেউ আগে থেকে অবগত থাকলে শব্দটি ব্যবহার করে তার ইঙ্গিত দেয়। ধরা যাক, বন্ধুকে আপনি এমন একটি মিম পাঠালেন, যেটি সরাসরি কিছু না বললেও বিশেষ কিছুর অর্থ প্রকাশ করে, যা আপনি জানেন। সে ক্ষেত্রে লিখতে পারেন Iykyk। উদাহরণ: ঠিক এটা বলছি না, তবে…Iykyk!

লিট (Lit): ইতিবাচক, মজার, বিস্ময়কর, দারুণ, চমৎকার বা ‘কুল’ অর্থে। এখন ‘কুল’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয় লিট। উদাহরণ: আজকের পার্টিটা লিট ছিল!

ওকে বুমার (OK Boomer): ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের বলা হয় ‘বেবি বুমার্স’ বা ‘বুমার্স’ প্রজন্ম। এই প্রজন্মের গোঁড়া মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোকে বলে ‘ওকে বুমার’। বুমার প্রজন্মের কেউ যদি বদ্ধমূল ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকেন, তখন সেসব ধারণাকে পাত্তা না দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো অর্থে এই শব্দ ব্যবহার করে জেন-জিরা। উদাহরণ: আপনার ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টা ভুয়া? ওকে বুমার!

পুকি (Pookie): আদর করে পছন্দের মানুষ, বিশেষত বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষকে ডাকা হয় ‘পুকি’। উদাহরণ: হ্যালো, মাই পুকি!

রেড ফ্ল্যাগ (Red flag): সম্পর্কের বেলায় কারও ব্যাপারে বিপৎসংকেত। আসন্ন বিপদ বোঝাতে লাল পতাকার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই। তেমনই সম্পর্কের বেলায় কারও ব্যবহারে বা কাজে যদি বিপদ বা ক্ষতির আভাস পাওয়া যায়, তাকে রেড ফ্ল্যাগ হিসেবে গণ্য করা হয়। উদাহরণ: ওর ব্যাপারে রেড ফ্ল্যাগগুলো আমার চোখেই পড়ল না!

রিজ (Rizz): ইংরেজি ‘কারিজমা’ শব্দটি থেকে এসেছে ‘রিজ’। বাংলায় যেটা কারিশমা বা আকর্ষণী শক্তি কিংবা মাধুর্য। কারও কথা, চলনবলন বা ব্যক্তিত্ব কতটা আকর্ষণীয়, তা বোঝানো হয় ‘রিজ’ দিয়ে। উদাহরণ: হি হ্যাজ অল দ্য রিজ।

সিম্প (Simp): কারও প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়া। বিশেষ করে কোনো নারীর প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়াকে বলে সিম্প। উদাহরণ: ওই মেয়ের জন্য এত সিম্পিং বাদ দে তো! ও তো তোরে চেনেই না!

স্কিবিডি (Skibidi): অতিরঞ্জিত কোনো কিছু কিংবা হাস্যকর। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: গানটা পুরাই স্কিবিডি।

সাস (Sus): সন্দেহজনক। ইংরেজি ‘সাসপেক্ট’ এবং ‘সাসপিশিয়াস’ শব্দ দুটির সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি দিয়ে কোনো বিষয়ে বা কারও ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ: তোকে কিন্তু সাস লাগতেছে! ঘটনা কী?

টি (Tea): পরচর্চা করা। নির্দিষ্ট কারও কিংবা কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা কিংবা পরচর্চা করা। মূলত চা খেতে খেতে আলোচনা থেকে ‘টি’ শব্দের এমন ব্যবহার শুরু। উদাহরণ: সো, হোয়াটস দ্য টি?