জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসের চেষ্টা করবে

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

নিষিদ্ধ হওয়ার পর এবার জামায়াত ও ছাত্রশিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তাদের জঙ্গি সংগঠন হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াত-শিবিরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা তো জঙ্গিবাদী হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সেখানেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদের মোকাবিলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সবাইকে মিলে করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছদ্মবেশে জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই বলে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী আবারও জাতিসংঘ (ইউএন) এবং অন্যান্য দেশের কাছে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে দেশব্যাপী তান্ডব চলাকালীন প্রতিটি ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষক লীগ (বিকেএল) এই কর্মসূচির আয়োজন করে। অনুষ্ঠান শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদ ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন তাঁর জীবন নাশের প্রচেষ্টা আগের ঘটনার মতো বারবার আসতে পারে। কিন্তু, আমি পাত্তা দিই না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েও নেবেন। জনগণের কল্যাণে যা যা করা দরকার আমি সবই করব।
সা¤প্রতিক সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের আড়ালে জঙ্গিরা তাদের হিংস্র দাঁত দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বস্ব হারিয়ে কাছের এবং প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা তিনি জানেন। সুতরাং, আমি প্রত্যেকটি জিনিসের (হত্যাযজ্ঞের) তদন্ত চাই যে, এর পিছনে কারা রয়েছে এবং কীভাবে এবং কী কী ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার সম্প্রতিক সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। পরে কমিশন গঠনের পর বিপুল সংখ্যক ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় এর পরিধি সম্প্রসারণ করে তিনজন সদস্য করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য দেশব্যাপী তান্ডব চালানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন ধ্বংসস্তূপে রূপ নেওয়ার আগে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করেছে। তারা মিছিল করে যেখানে যেতে চেয়েছে, তাদের সেখানে যেতে দিয়েছে। তিনি নিজেও আইনশৃংখলা বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী মিথ্যা অপপ্রচার সমানে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না। আমি তো নিজেই সবকিছু হারিয়েছি এবং গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা ও সরাসরি গুলি করে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তারপরেও আমি সাহস নিয়ে কাজ করে গেছি। ভয়ও পাইনি, পিছুও হটিনি। কারণ আমার লক্ষ্য এ দেশের মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন- সে কাজটা আমাকে করতে হবে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি বলতাম ‘টাইম ইজ টু শর্ট’। কেননা যে কোন জায়গায়, যে কোন সময়ে ঘাতক আমাকে আঘাত করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ, আমি মানুষের জন্য কাজ করবো।
তিনি বলেন, লক্ষ্য স্থির করেছিলাম যে- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে আসবো, আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের যে মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়েছিল, তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছিল। আজকে আমরা কি দেখি, সব জায়গায় বাংলাদেশ সম্পর্কে আবার একটা নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশে^ বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সেটা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটিয়ে আজকে সেই মান সম্মান সব নষ্ট করা হচ্ছে। এটার বিচার আমি জনগণের কাছেই দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এমনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পোড়ানো হল- ঠিক ফিলিস্তীনের গাজায় যেভাবে হাসপাতালে বোমা হামলা করে ধ্বংস করা, শিশু হত্যা ও মানুষ হত্যা সেই একই ঘটনা যেন এখানে ঘটানো হচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের।
তিনি বলেন, একটা কোটা আন্দোলনের নাম দিয়ে এই ভাবে একটা নাশকতা ও জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করা! যে জন্য তিনি ১৭ তারিখ টেলিভিশন ভাষণে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, যারা আপনজন হারিয়েছেন, যে মা তার সন্তান হারিয়েছেন, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছেন তাদের কি কষ্ট সেটা আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি। স্বজন হারাবার বেদনা নিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এদেশে ফিরে এসেছিলাম যেন দেশের মানুষ দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে একটা সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়, স্বাধীনতার সুফল পায়- সে আশায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই প্রত্যেকটি জিনিসের তদন্ত হোক। কারণ এর পেছনে কি কি ভাবে কি কি ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসুক। আমি জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, তারা যেন তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠায়, অন্য কোন দেশ যদি চায় তারাও যেন বিশেষজ্ঞ পাঠায়। কারণ আমি চাই এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।