জাতিসংঘের অধিনে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক

8

জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৪৬ দিনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ‘নিরপেক্ষ ও স্বাধীন’ তদন্ত করবে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে কারা এর সঙ্গে জড়িত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ কী, সেটিও খুঁজে বের করে ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের বিষয়েও সুপারিশ করবে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টুর্কের কাছে চিঠি দেওয়া হলে তারা এই উত্তর দিয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তারা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল বাংলাদেশে পাঠাবে। অন্তর্র্বর্তী সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের পূর্ণ সহায়তা দেবে বলে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল আসার আগে আগস্ট ২২ থেকে ২৯ পর্যন্ত একটি অগ্রগামী দল বাংলাদেশ সফর করেছে। তারা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র, উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আন্দোলন চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত কীভাবে করা হবে সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছে অগ্রগামী দলটি। একইসঙ্গে সুশীল সমাজের জন্য ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য মানবাধিকার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছে। গুম সংক্রান্ত কনভেনশনে পক্ষ হওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশে এর আগে সংঘটিত গুম বিষয়ে তদন্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি তৈরি করাকে স্বাগত জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুম বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিস সরব ভ‚মিকা পালন করেছে। এ বিষয়ে সব রকম সহায়তা দেওয়ার জন্য মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিস তৈরি আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক আগামি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আসবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি ঢাকা আসতে পারেন। উল্লেখ্য যে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা বিষয়ে এক সপ্তাহে জাতিসংঘের অগ্রবর্তী দল দেশে কি করেছে তা জানিয়েছে জাতিসংঘের অগ্রবর্তী দল। দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় হতাহত ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় থেকে যে অগ্রবর্তী দলটি পাঠানো হয়েছে, তারা এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাবিনা শামদাসানি গতকাল শুক্রবার বিবৃতিতে দিয়ে এই তথ্য তুলে ধরেছেন।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তখন আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় কয়েকশ মানুষ নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্তি বলপ্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। গুলিবিদ্ধ অনেক শিশু, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তদন্তের কাজে বাংলাদেশে পাঠানো অগ্রবর্তী দলটি গত সপ্তাহে (২২-২৯ অগাস্ট) ছাত্র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের অনেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আটক বা আহত হয়েছিলেন। অন্তর্র্বর্তী সরকারের বেশিরভাগ উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্র্মতাদের সঙ্গেও বিশদ আলোচনা করেছে তারা। অগ্রবর্তী দলের সদস্যরা আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সংখ্যালঘু ও আদিবাদী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন মুখপাত্র রাবিনা। ‘এসব বৈঠকে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও উত্তাল পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অব্যবহারের বিষয়ে কোন কোন পদ্ধতি অলম্বন করে তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছে দলটি’, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীসরকার এই তদন্ত করতে অনুরোধ করেছে বলে তুলে ধরে রাবিনা বলেন, তদন্তের পরিসর রাখা হয়েছে দেড় মাস অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট। ৫ অগাস্ট সরকার পতন হলেও পরের কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান; বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরও হামলা হয়, তাদের ঘরবাড়িতে লুটপাট ও আগুন দেওয়ার খবর রয়েছে। দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে জাতি সংঘের অধিনে তদন্তের মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সকল অপ্রীতিকর ঘটনার ন্যায়বিচার হোক তা কামনা করে দেশের জনসাধারণ।