জলের তলে নগরী

14

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিরামহীন বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার সময় গত রবিবার রাতে বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল সোমবার দিনভর তা অব্যাহত ছিল। ভারী বৃষ্টিপাতে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে। সকাল সকাল নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলি তলিয়ে যায়। অনেক বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকেছে।
চলতি মৌসুমে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বৃষ্টির জলে তলিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরীর বাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টিতে অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে থাকায় সকালে অফিসগামী মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যেতে পারেন নি। আবার বসতঘরে পানি ঢোকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। অবশ্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের ঘরের বাইরে বের হতে হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার সকাল ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত নগরীতে রেকর্ড করা হয়েছে দুইশ’ চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। আর গতকাল সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় একশ’ ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর চকবাজার, ডিসি সড়ক, কে বি আমান আলী সড়ক, বাকলিয়া, জিইসি, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, খতিবের হাট, মেহেদীবাগ, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, প্রবর্তক মোড়, তিন পোলের মাথা, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, এম এম আলী সড়ক, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চকবাজার ডিসি সড়কের গণি কলোনি এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, নগরীর আন্দরকিল্লায় তার প্রিন্টিং প্রেসের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সকাল সকাল দোকান খুলে বসেন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখেন বাড়ির সামনের রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। যেকোনো সময় ঘরেও পানি ঢুকে যেতে পারে। রাস্তার ওপর যে পরিমাণ পানি, তাতে ঘর থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়নি। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় কাজে যেতে পারেননি নগরীর চকবাজারের মুহম্মদ আলী শাহ লেনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ। তিনি জানান, সকালেই ঘরে পানি ঢুকেছে। আবার যেখানে চাকরি করেন সেই ডিসি সড়কেও পানি। জলাবদ্ধতার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারেন নি তিনি। জরুরি কাজ থাকায় সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আতিকুল ইসলাম। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিকে থাকেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে এলাকায় পানি উঠেছে। পাশের এলাকা বহদ্দারহাট ও মুরাদপুরেও পানি। রাস্তাঘাটে তেমন গাড়ি ছিল না। কয়েকটি রিকশা থাকলেও ভাড়া বেশি চাইছে। তাই পানি ডিঙিয়ে হেঁটে বাসা থেকে মুরাদপুরে যেতে হয়েছে।
এর আগে ৬ মে এক দফা জলাবদ্ধতায় ডুবেছিল নগরী। ওই দিন বিকেলে টানা এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বন্দর নগরীর নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। নগরীর পাঁচলাইশ, প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর, মির্জাপুল, ওয়াসা মোড়, তিন পোলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, চকবাজার, এম এম আলী সড়ক, বহদ্দারহাট এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কোথাও কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছিল। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আবদুর রহমান জানান, চট্টগ্রামের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, খুলনার কয়রায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নাচাপ হিসাবে বর্তমানে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশঃ বৃষ্টিপাত ঝড়িয়ে স্থল নি¤œচাপে পরিণত হবে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল ও বিমানবন্দর ফের চালু : প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বন্ধ থাকা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা পুনরায় শুরু হয়েছে। এছাড়া রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে টানা সাড়ে ১৫ ঘণ্টা বন্ধের পর চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল।
গতকাল সকাল সাড়ে ন’টায় চালু করা হয় পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের একমাত্র বঙ্গবন্ধু টানেল। এছাড়াও টানা প্রায় ১৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার ভোর পাঁচটা থেকে পুনরায় শুরু হয় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম। বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানান, বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল ভোর পাঁচটা থেকে বিমানবন্দরে যাত্রী সেবাসহ রানওয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। গত রবিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর দুপুর ১২টা থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল ধরনের ফ্লাইট অপারেশনসহ সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে রাত আটটা পর্যন্ত এ ঘোষণা বহাল থাকার কথা থাকলেও পরে তা সোমবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বঙ্গবন্ধু টানেল সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল, ট্রাফিক ও ইএমই) মো. নজরুল ইসলাম জানান, গতকাল সকাল সাতটার দিকে টানেল চালু করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ভারি বৃষ্টির কারণে সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সময় বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে উভয় প্রান্ত থেকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক আছে, তবে অন্য সময়ের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেকটা কম। এর আগে রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বন্ধ রাখা হয় বঙ্গবন্ধু টানেল।