ছাগলকান্ডের সেই মতিউর গেলেন স্বেচ্ছা অবসরে

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

ছাগলকান্ডে আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। গতকাল বুধবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন মতিউর। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪৪(১) ও ৫১ ধারা চলতি বছরের ২৯ আগস্ট থেকে তাকে অবসর (ঐচ্ছিক) দেওয়া হয়েছে। ৫১ ধারা অনুযায়ী, সরকারি অর্থ সংশ্লিষ্ট আইনি কার্যক্রম চলায় মতিউর অবসরোত্তর ছুটি, ল্যাম্পগ্রান্ট এবং পেনশনের মত সুবিধা তিনি পাবেন না। খবর বিডিনিউজের।
গেল কোরবানির ঈদের সময় অভূতপূর্ব এক ছাগল বিতর্কে নাম জড়ানের পর এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো হয় মতিউরকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সদস্য পদও হানান তিনি। গত ২৩ জুন তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু এক মাসেও নতুন দপ্তরে তিনি যোগ দেননি। তার মোবাইল নম্বর ছিল বন্ধ, তার কোনো হদিসও দিতে পারছিলেন না অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।
এই সময়ের মধ্যে ‘মতিউর মাথা ন্যাড়া করে’ বিদেশ পালিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আবার ‘তিনি দেশেই আছেন’ বলেও প্রতিবেদন ছেপেছে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম।
এর মধ্যে দুদক তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে। আদালতের আদেশে তার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে।
মতিউর যেভাবে বিপাকে : কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার খবর ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন মতিউর। একজন রাজস্ব কর্মকর্তার ছেলে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে কীভাবে ছাগল কিনতে পারেন সেই প্রশ্ন উঠে। মতিউর প্রথমে ইফাতকে নিজের ছেলে হিসাবে অস্বীকারও করেন।
একটি টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কাউকে তিনি চেনেন না। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।
এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা।
মতিউর এনবিআর থেকে বদলি এবং সোনালী ব্যাংকের পদ খোয়ানোর পর ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের’ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।
কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আদালত তার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে। মতিউর এবং তার প্রথম স্ত্রী বিদেশ যাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেসব দুদক তদন্তও করেছে। মতিউর সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; বিনিয়োগ করেছেন পুঁজিবাজারেও।
বিপুল আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মতিউর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একটা গ্রুপ অব কোম্পানির ৩০০ একরের জমিতে আমার একটা অংশ আছে। কোনো কারখানায় আমার বিনিয়োগ আছে। কিন্তু ৩০০ একর জমি বা কারখানার পুরোটা আমার না। আমাদের পরিবারের বিনিয়োগ আছে মাত্র।