চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে

6

উজানের পাহাড়ি ঢল, স্থানীয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ভারত থেকে আসা নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়িসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি, খেতখামার, পুকুর, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এক কোটির কাছাকাছি মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা করা সম্ভব হয়নি। আবার পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেনি অনেকেই। অনেকে আবার ঘরবাড়ি চুরি ও ডাকাতির ভয়েও যান নি। এ পরিস্থিতিতে এসব জেলার মানুষের জনদুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়। তাদের অনেকের বন্যার পানিতে সলির সমাধি ঘটেছে। দীর্ঘ আট দিন পর এখন বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ভানবাসী অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে নিজের বাড়ি ঘওে ফিরতে শুরু করেছে। তবে যা রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছিল, তার কোন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। কাঁচা ঘরবাড়িগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নামার পর এর কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষের থাকা, সুপেয় পানি, ঔষধ ও খাদ্যসংকট তীব্র হচ্ছে। ফলে এ মুহূর্তে দরকার বন্যা উপদ্রæত এলাকার মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রি ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো। এর সাথে ঘরবাড়ি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। চিকিৎসা, ত্রাণসহায়তা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিতে হবে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা বন্যা উপদ্রæত এলাকায় যাচ্ছে। কিন্তু তারা রাস্তাঘাট চেনে না। বন্যার পানির কারণে বুঝতে পারছে না কোন দিকে যেতে হবে। ফলে তারা রাস্তার আশপাশের জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারছে না। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী এক দলের সঙ্গে অন্য দলের সমন্বয় না থাকায় ঘুরেফিরে একই জায়গায় ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। সমন্বয়হীনতার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছেনি। এখন দরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে অবিলম্বে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো যায়। যদিও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হেলিকপ্টারে করে ত্রাণ বিতরণ করছেন, তাতেও সকলের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিম মোতায়েন রয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জরুরি ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে দেশব্যাপী। বন্যার্তদের ত্রাণ সহযোগিতায় সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। লক্ষ করা গেছে, সবকিছু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার, ওষুধসহ বিভিন্ন মৌলিক জিনিসপত্রের তীব্র সংকট। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শুধু মিরসরাই, ফটিকছড়িতে ছয় হাজার নলকূপ ও শৌচাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় হিমশিম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা মনে করি, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলে প্রত্যেকের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। বিশেষ করে যাদের ঘরবাড়ি ও কৃষি, মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ঘর মেরামত করতে হবে তাকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। যার কৃষি উপকরণ দরকার তাকে উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির সুযোগ নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে তা মেরামত ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বরর্তীকালীন সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের আয়ত্তের বাইরে। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয়ই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বন্যার্তদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ত্রাণসহায়তা আসছে সেগুলো তাদের কাছে সুন্দরভাবে পৌঁছাতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার ও প্রশাসন এ বিষয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন এটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।