চা শ্রমিকরা আর ভাসমান থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী চা-এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চা পাতা বাল্কে বিক্রি না করে এর মূল্য সংযোজন করতে সংশ্লিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের রুচি এখন বদলে গেছে। বিভিন্ন ধরনের চা এখন পাওয়া যায়। সুগন্ধি চা তৈরি করুন। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্বাদের চায়ের চাহিদা এখন অনেক বেশি। চা উৎপাদনের পাশাপাশি এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় চা দিবস’ উদযাপন এবং জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৪’ প্রধান উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটায় এখন বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যাচ্ছে। হারবাল টি, ‘মসলা টি’ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য ‘অ্যারোমা টি’ উৎপাদন করা প্রয়োজন। কারণ, বিভিন্ন অ্যারোমা চায়ের কদর অনেক বেশি। তাছাড়া তুলসি, আদা, লেবু, তেজপাতা, এলাচ,লং, দারুচিনি প্রভৃতির সাহায্যে আমরা যে চা বানাই সে চা’টাও প্যাকেটজাত করা যায়। খবর বাসসের।
সরকার প্রধান বলেন, আমি যারা চা মালিক এবং ব্যবসায়ীগণ রয়েছেন তাদেরকে বিশেষ করে মালিকদের বলবো আপনারা ভ্যালু এ্যাডেড করেন। বাল্কে চা বিক্রীর পরিবর্তে যদি ভ্যালু এ্যাডেড করেন তাহলে আপনারা ভাল দাম পাবেন। উপার্জন করতে পারবেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাঁ পাতা থেকে চা তৈরীতে গবেষণা চলছে এবং সীমিত আকারে উৎপাদন হচ্ছে। এটি নিয়ে আরো গবেষণা করে এর উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা’কে বহুমুখি করা এবং অ্যারোমা টি তৈরি করা, যেটার চাহিদা বিদেশে এখন অনেক বেশি। তাই সেদিকেই আমাদের নজর দেওয়া দরকার। চা পাতা শুধু বাল্কে বিক্রি না করে ভ্রালু এ্যাডেড করে সেটা আমরা রপ্তানি করবো। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্র অর্জনের পাশাপাশি উৎপাদকদেরও ভাল উপার্জন হবে।
তাঁর সরকারের সারাদেশে বিদ্যুতায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির উল্লেখ করে বলেন, এখন গ্রাম গঞ্জের মানুষ অনেক বেশি তথ্য পান। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রাত ১১টা ১২টা পর্যন্ত সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতির আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড় ওঠে।
তিনি বলেন, চা’য়ের কাপে এই ঝড় দিন দিন বাড়ছে কাজেই চা’য়ের চাহিদাও বাড়ছে। সেজন্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। আর এটা করার জন্য যা যা করার দরকার অবশ্যই আমরা তা করবো। আপনাদের সবরকম সহযোগিতা করবো সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি শ্রমিকদের প্রতি আরো যত্নবান হওয়ার এবং তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়াসহ তাদের সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য চা বাগানের স্কুলগুলোর উন্নয়নে মালিকপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা বাগানে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকেই রয়েছেন। কাজেই তাদের জীবন মান উন্নত করা, আর্থিক দিক দেখা, ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত দেখা কিন্তু মালিকদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, ‘অভিভাবকের মত আপনারা সেটা দেখবেন, আমরা সেটাই চাই’। পাশাপাশি চা শ্রমিকরা আর ভাসমান থাকবে না, সে বিষয়টিও দেখার দায়িত্ব আমাদের।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও শ্রমিকদের মাঝে ৮টি ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় চা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে চা শিল্পের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে চা মেলারও উদ্বোধন করেন এবং পরে বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং চা মেলা পরিদর্শন করেন।
আমাদের শিশুরা পিছিয়ে থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের শিশুরা কেউ পিছিয়ে থাকবে না। তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না।
তিনি বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তির যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিশুরা পিছিয়ে থাকবে না। আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান দিয়ে আমরা তাদের গড়ে তুলবো।
তিনি গতকাল বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ৯৯তম, শততম, ১০১তম, ১০২তম, ১০৩তম এবং ১০৪তম জন্মবার্ষিকীর প্রতিযোগিতার বিজয়ী ৩০৪ প্রতিযোগির মাঝে এই পুরস্কার বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমাদের ঘোষণা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সেজন্য আমরা স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করে দিয়েছি, কম্পিউটার ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার করে দেওয়া হয়েছে যেখানে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, তথ্য প্রযুক্তি তথা ডিজিটাল সিস্টেমের প্রসার আমরা ঘটাচ্ছি। তার কারণ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে কেন?। তাদেরকেও সেভাবে একটি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলবো। আর ’৪১ এর যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’, আজকের শিশু ও তরুণরাই হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যত কর্তধার।