চালের বাজারে চলমান অস্থিরতার প্রভাব

5

ফারুক আবদুল্লাহ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চলমান অস্থিরতায় চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে। বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। পাইকারিতে চাল ভেদে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। এমন পরিস্থিতিতে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আড়তদাররা বলছেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে চালবাহী গাড়ির ভাড়া আগের তুলনায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। আগে ট্রাকপ্রতি ভাড়া ছিল ১৮ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা, এখন তা ২৪ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। আর মোকামে ধানের দাম বেশি দেখিয়ে দাম বাড়ানোর কারণেও বেড়েছে চালের দাম। ধানের দাম আগের চেয়ে মণপ্রতি ২০০ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে।
এছাড়া চলমান অস্থিরতার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বৈধ ও অবৈধ গুদামে চালের মজুত বাড়িয়ে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে বাজারে। তাদের দাবি, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একেবারে মিল পর্যায় থেকে কঠোরভাবে তদারকি শুরু করতে হবে। শুধুমাত্র খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
চট্টগ্রামের চালের সবচেয়ে বড় আড়ত নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলী এলাকায়। এই দুই আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। মোটা চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আগে বিক্রি হয়েছিল ১৯৫০-২০০০ টাকা, যা এখন ২২০০ টাকা। নুরজাহার (পাইজার-সেদ্ধ) বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২৫০০ টাকা বিক্রি হলেও তা এখন ২৯০০ টাকা। গুটি স্বর্ণা চালের প্রতি বস্তা ৩৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬৫০ টাকা। আর বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে মিনিকেট (সেদ্ধ) চাল। এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ টাকা। একইভাবে জিরাশাইল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৪০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া মিনিকেট (আতপ) বস্তাপ্রতি ২৮০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, এখন তা ৩০০০ থেকে ৩০৫০ টাকা। বস্তাপ্রতি বেতি চাল বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ২৫০০ টাকা। ৩০০ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা কাটারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। একইভাবে প্রতি বস্তা পাইজারে বেড়েছে ২৫০ টাকা। প্রতি বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ টাকা পর্যন্ত।
ক্রেতারা বলেছেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, দেখার কেউ নেই। যখন খুশি ইচ্ছে মতো নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, কানো রকমে খেয়ে-পড়ে বঁচে থাকাটাই দায়।
চাক্তাই চালের আড়ত বাগদাদের ম্যানেজার আরিফ মঈনুদ্দীন জানান, গত মাসের তুলনায় এই মাসে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো- চলমান অস্থিরতায় গাড়ি আসেনি, গাড়ি ভাড়া আগের তুলনায় বেশি এবং মিলাররা কৃত্রিম সংকট করে চাহিদার অনুপাতে মাল আসছে কম। এছাড়া ক্যাশে লেনদেন বৃদ্ধির কারণ রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চলমান পরিস্থিতি, গাড়ি ভাড়া এবং মোকামে ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বলতে গেলে চালের বাজার কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। তারা স্টক করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বাজার দখলে নিয়েছে। এ চাল প্যাকেজিং বাজার অস্থিরতার অন্যতম কারণ।