চামড়া সংগ্রহে পূর্ণ প্রস্তুতি দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা

5

এম এ হোসাইন

চামড়া সংগ্রহের পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত আতুরার ডিপোতে। চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ লবণ। এবার লবণের কোনো সংকট নেই। নিশ্চিত করা হয়েছে প্রয়োজনীয় শ্রমিকের যোগানও। এর মধ্যে সরকার গরুর চামড়ায় বর্গফুট প্রতি ৭ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া এবং গতবারের চেয়ে চামড়ার দাম বাড়ানো হলেও কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের বেশিরভাগ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়ে আসে আতুরার ডিপোতে। সেখানেই সংরক্ষণ করা হয় চামড়াগুলো। এর বাইরে বিভিন্ন এতিমখানা, মাদ্রাসা নিজস্ব উদ্যোগে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে। এসব চামড়াও পরবর্তিতে আতুরার ডিপো হয়ে বা সরাসরি ট্যানারিতে যায়। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে সে দাম কোথাও মানা হয় না। বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষণ করা চামড়াগুলোর দাম নির্ভর করে ট্যানারি মালিকের ইচ্ছের উপর। যার কারণে চামড়ার দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রস্তুতি চলছে। লবণ মজুদ করা, শ্রমিকের ব্যবস্থা করা- এসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা এবার সাড়ে তিন লক্ষ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সে অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চামড়া সংগ্রহ করার পর সংরক্ষণ ও বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে খরচ পড়ে। শুধু লবণই লাগে প্রতি চামড়াতে ১০ কেজি করে। যে দাম নির্ধারণ করা হয় ট্যানারি থেকে সে দাম পাওয়া যায় না। আমাদের ১১২ জন আড়তদার ছিল। ২০১৫ সাল থেকে চামড়ার ব্যবসায় লোকসান দিতে দিতে এখন সেটা ২০-৩০ জনে চলে এসেছে।
আতুরার ডিপোর কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সদস্য আছে ১১২ জন। চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে ২৫০ টির মতো আড়ত আছে। প্রত্যেক আড়তের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত লবণ মজুদ ও লোকবল নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সব চামড়া আড়তে না এনে স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন আড়তদাররা। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। ফলে শহরে চামড়া সংরক্ষণের চাপ কমে।
গত কয়েকবছর ধরে ধীরে ধীরে চামড়ার ব্যবসায় বিপর্যয় শুরু হয়। দাম কমতে কমতে দুই বছর আগে মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া বহনের খরচ পর্যন্ত পায়নি। দাম না পাওয়ায় অনেকে চামড়া নষ্ট করেন। চামড়ার ব্যবসায় নেমে অনেক ব্যবসায়ীকে হারাতে হয়েছে শেষ পূঁজিটুকুও। সরকার থেকে দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেটার বাস্তব প্রতিফল হয় না বাজারে। প্রতিক‚ল পরিস্থিতির মধ্যে চামড়ার বাজার নিয়ে এখনো কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে যেতে পারছেন না আড়তদাররাও।
এবছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতবারের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা বাড়িয়ে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে ছাগল ও অন্যান্য ছোট পশুর চামড়ার দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা।