চসিক মেয়রসহ চট্টগ্রামের ৬২ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ

28

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর স্থানীয় সরকার বিভাগ সংস্কারে প্রথমেই নজর দিয়েছেন। অপসারণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, ১৫ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৩০ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৫ পৌরসভার মেয়রকে। সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই কর্মকর্তারাই সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এখনো সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের সদস্য, উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। অপসারণ হওয়া জনপ্রতিনিধিরা ২ মাস থেকে তিন বছর যাবত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যারা বিগত সরকারের আমলে ‘প্রশ্নবোধক ভোটে’ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব অলরেডি নিয়েছি। চসিক কাউন্সিলর, পৌর কাউন্সিলর, ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ সদস্যদের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পেতে আমরা স্থানীয় সরকারে দিকে তাকিয়ে আছি। যখনই যে সিদ্ধান্ত আসবে আপনারা জানবেন।’
চসিক মেয়র : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকেও অপসারণ করা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী একই বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ প্রথম দফায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ জুলাই পুনরায় চসিক নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এ সময়ে চসিকের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হলে নির্বাচন কমিশন ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জয়ী হয়।
জেলা পরিষদ : চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ জেলা পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম জয়ী হন।

১৫ উপজেলা : চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে গত ৮ মে মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপে, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশে, চতুর্থ ধাপে ৫ জুন বাঁশখালী, লোহাগাড়ায় উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রাউজানে উপজেলা চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান, রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, চন্দনাইশে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, স›দ্বীপে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। এছাড়াও সাতকানিয়া উপজেলায় ২০১৯ সালে ও কর্ণফুলীতে ২০২২ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করায় এসব উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।

১৫ পৌরসভা : বারৈয়ারহাট, মিরসরাই, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়েছে। যে কারণে এসব পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। পটিয়ায় চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, বারৈয়ারহাটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সীতাকুন্ডে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সাতকানিয়ায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ), বাঁশখালীতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। চন্দনাইশ, রাউজান, মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালীতে উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নাজিরহাটে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সিনিয়র সহকারি কমিশনার ও দোহাজারিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আরএম শাখার সিনিয়র সহকারি কমিশনার প্রশাসক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। হাটহাজারীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন।
২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে সীতাকুন্ডে, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বোয়ালখালী, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, ২৮ ফেব্রুয়ারি বারৈয়ারহাট, মিরসরাই, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ২০২২ সালের ২ নভেম্বর ফটিকছড়ি, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই দোহাজারি, ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ নাজিরহাট পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হাটহাজারীকে ২০১২ সালে পৌরসভা ঘোষণা করা হলেও সেখানে নির্বাচন হয়নি। প্রশাসক নিয়োগ করেই এ পৌরসভার কার্যক্রম চলছিল। এর আগে গত শুক্রবার ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একইসঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।