চসিকের ৭০ ভাগ কাউন্সিলর এখনও আত্মগোপনে

35

ওয়াসিম আহমেদ

সরকার পতনের পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৭০ ভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপনে রয়েছেন। বাকী ৩০ ভাগ ‘অনিয়মিতভাবে’ অফিস করার দাবি করলেও বাস্তবে কার্যালয়ে আসছেন না কেউ। মূলত অন্যত্র অবস্থান করে অনলাইনে কিছু নাগরিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চসিক মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি কাউন্সিলরদের নিয়ে। যার কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকায় জনগণ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, আলোকায়ন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের তদারকি মুখ থুবড়ে পড়েছে। যা, আগে কাউন্সিলররা করতেন। এমন অবস্থায় করণীয় জানতে চেয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে চিঠি লিখেছেন চসিকের সিইও (যুগ্ম সচিব) শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
১৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ৫৫ জন কাউন্সিলর রয়েছে। যার মধ্যে ৪৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কাউন্সিলর রয়েছে। বাকী ৬ জন স্বতন্ত্র নির্বাচন করে কাউন্সিলর হলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে। যার কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়রদের অপসারণ করে কাউন্সিলরদের রেখে নগর প্রশাসন ও সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তারা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উচিত হবে মেয়রদের মতো কাউন্সিলরদেরও বহিষ্কার করে দেওয়া। একই সঙ্গে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ঐ সেবা স্থানান্তর করা। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ অর্ধেক করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদাররা। যেসব আগে কাউন্সিলররা তদারকি করতেন। এখন তারা না থাকায় সেটির কাজ আগাচ্ছে না। কয়েকজন ওয়ার্ড সচিবরা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকলেও কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের পাওয়া যায়নি।
১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডের জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে নাগরিক সনদ ও ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়। এসব সেবার সনদ নিতে কাউন্সিলরের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক বার গিয়েও ফিরে এসেছি। অন্য এক বাসিন্দা বলেন, আগে কাউন্সিলর অফিস থেকে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কাজ তদারকি করা হতো। কয়েক দিন ধরে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কার কাছে বলব তাও বুঝতে পারছি না। কাউন্সিলর অফিসে তালা ঝুলছে। মশার ওষুধ ছিটানো, রাস্তাঘাট পরিষ্কার, জন্ম-মৃত্যু সনদসহ ১৪টি খাতে সেবা দিয়ে থাকেন কাউন্সিলররা। এখন অচল প্রায় কাউন্সিলর অফিস।
গতকাল স্থানীয় সরকরা মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত চসিকের চিঠিতে ১৬ জন কাউন্সিলর অনিয়মিতভাবে অফিস করার দাবি করা হয়। মূলত তারা আত্মগোপনে থেকে ওয়ার্ড সচিবদের দিয়ে অনলাইনে কিছু সেবা দিচ্ছেন। অনেকে কিছু না করেও ওয়ার্ড সচিবকে দিয়ে অফিস করছেন বলে দাবি করছেন।
তবে ওসব এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, মূলত কোনো কাউন্সিলরই অফিস করছেন না। আগের স্বাক্ষর করা নাগরিক সনদ দিচেছন ওয়ার্ড সচিবরা। তাছাড়া বেশিরভাগ কাউন্সিলরই নগরীর থানা হওয়ায় হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। ফলে বেশিরভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন এবং অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। অফিস করার দাবি করা ১৬ জনের ১৩ জনই সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।
মূলত সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নির্ধারিত কোনো অফিস থাকে না। নিজের বাসাকেই অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন তারা। বাকী তিনজন হলেন, ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিউল আজিম, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু, ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম। মূলত তারা অন্যত্র অবস্থান করে অনলাইনে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
এসব নিয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে, সেভাবে কার্যকর করা হবে। চসিকের নিয়মিত সেবা কার্যক্রম আমরা মনিটরিং করছি। প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আগামী ১ তারিখ থেকে ছয়টি জোনের আঞ্চলিক জোনের কার্যক্রম শুরু হবে। নাগরিক ভোগান্তি কমে আসবে।’