চলতি অর্থবছরে রেকর্ড রেমিট্যান্স চট্টগ্রামে

7

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলিত অর্থবছর শেষ হতে আরো দুইমাস বাকী। এর মধ্যেই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে চট্টগ্রামে। চলিত অর্থবছর প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৮৬৪ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) ২০ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এটি বিগত অর্থ বছরগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে শ্রমিকরা কোন ধরনের ট্রেনিং নিয়ে যেতেন না। এখন বিদেশে কর্মী প্রেরণের আগে সরকার বিভিন্ন ট্রেনিং করায়। দক্ষতার কারণে প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সরকারী প্রণোদনার কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছে ২০ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রথম তিন মাসে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) এসেছে ৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। পরের তিনমাস (অক্টোবর- ডিসেম্বর) এসেছে ৬ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা এবং জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চার মাসে এসেছে ৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।তাছাড়া প্রবাসীরা ২২-২৩ অর্থবছরে পাঠিয়েছে ১৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২১-২২ অর্থবছরে পাঠিয়েছে ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০-২১ অর্থবছরে পাঠিয়েছে ১৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে সরকার উৎসাহ দিয়ে আসছে। সরকার প্রণোদনার পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও দিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা অবৈধ বা হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তাছাড়া ডলারের দাম নিয়ে কড়াকড়ি থেকে সরে আসায় রেমিট্যান্সর প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২৩ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি বিদেশে অবস্থান করছেন। তাদের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত।
প্রবাসী আয়ের ব্যবহার নিয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রবাসী আয়ের ৩৪ শতাংশ অর্থ ব্যবহৃত হয় প্রবাসীর পরিবারের খাদ্য ও বস্ত্রের পেছনে। ১৯ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা হয় আবাসন তথা জমি বা ফ্ল্যাট কেনায়। আর ১৮ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা মাছ, মুরগি ও গবাদিপশুর খামারে। গবেষণায় বলা হয়, দেশের দারিদ্র্য বিমোচনেও প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, শ্রমিকের চেয়ে বিদেশে প্রবাসী ব্যবসায়ী বাড়ছে। অনেক প্রবাসী বিদেশে ব্যবসা করছেন। রেস্টুরেন্ট, হোটেল, সুপারশপসহ নানা ব্যবসা করছেন। সরকারের বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের কারণে প্রবাসীরা এখন অনেক সচেতন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আমরা উৎসাহ করি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। বৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি, দেশে থাকা পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীলতা, অর্থ প্রেরণের নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কর ছাড় ও বড় দেশের প্রণোদনার অর্থের কিছু অংশও আসা এসব কারণে রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপিও বৃদ্ধি পায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।