চন্দনাইশে পোস্টার-ব্যানার সর্বত্র মাইক বাজিয়েও চলছে নির্বাচনি প্রচারণা

4

মো.শাহাদাত হোসেন, চন্দনাইশ

আর মাত্র ৩ দিন পর চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচন। তীব্র গরমের মধ্যে সারাদেশের ন্যায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় গণ-সংযোগে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তবে এবার ডিজিটাল প্রচারণা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পাশাপাশি পোস্টারে ব্যানারে ছেঁয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা।
চন্দনাইশ উপজেলার পাড়া-মহল্লায় গানে গানে প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা করা হচ্ছে। এটি ভোটারদের আকৃষ্ট করছে। পথে পথে মাইকে ভেসে আসছে চেনা-অচেনা শিল্পীর কণ্ঠে ভোটের গান। পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিসগুলোতেও অবিরাম বেজে চলেছে নির্বাচনের ভোট চাওয়ার গান। মাঝেমধ্যে বাজানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের গানও। বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের সেই সব কালজয়ী গান, যে গানে মুক্তিযোদ্ধারা উদ্দীপ্ত হতেন রণক্ষেত্রে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জায়গা ঘুরে গানে গানে ভোটের প্রচার চোখে পড়েছে। ভোটের গানে উঠে এসেছে প্রার্থীদের কর্মকান্ড ও প্রসংশা। বিশেষ করে নির্বাচন পরবর্তী প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া, নাগরিকদের সার্বিক নিশ্চয়তা। প্রার্থীদের নিজস্ব প্রতীকের পোস্টারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে চন্দনাইশের অলিগলিসহ সব জায়গা।
সচেতন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ভোটে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। কারণ এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় চন্দনাইশের ২য় বৃহত্তম দল এলডিপির নিজস্ব প্রার্থী না থাকলেও নাগরিক কমিটির প্রার্থীকে মৌন সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানুষের মুখে শুধু ভোটের আলাপই হচ্ছে। ভোট কাকে দেবেন এবং কেন দেবেন, এমন বিচারবোধ এখন বাংলাদেশের সব মানুষের মধ্যেই চলে এসেছে। তাই এবারের ভোটে কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোকটিও নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। সব ধরনের নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ ডিজিটাল প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে প্রার্থীরা। ‘আমার ভোট আমি দেবো, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেবো’, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, স্বাধীনতার স্বপক্ষে হোক’, ‘রক্তভেজা বাংলায় রাজাকারমুক্ত সংসদ চাই’, ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রার্থীর বিকল্প নেই’ -এমন শ্লোগান ও লিফলেট ভোটারদের ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে প্রার্থীর সমর্থকেরা।
প্রচÐ গরমের মধ্যেও নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো কমতি নেই। চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা সকাল থেকে প্রচারণাযুদ্ধে নেমে পড়েন, যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। পোস্টার, মিছিল, মাইকিং, গণসংযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, পথ সভাসহ সব ক্ষেত্রেই প্রার্থীদের প্রচার চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন ৬ প্রার্থী। তবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকে প্রচার-প্রচারণার কথা থাকলেও অনেক প্রার্থী তা মানছে না বলে ভোটারদের অভিযোগ। সকাল থেকে মাইকের আওয়াজে সাধারণ মানুষ, এইচএসসি ও অনার্স পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান রেনু বলেছেন, গত ১৯ মে থেকে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছন। এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরস্থ বিদ্দিনী পুকুর পাড়, মেডিকেল গেইট, কলেজ গেইট, খানহাট, জোয়ারা রাস্তার মাথা, বাদামতল, বাদামতল রাস্তার মাথা, রওশনহাট, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল গেইট, দোহাজারী, জামিরজুরী, বাগিচাহাট, সাতবাড়িয়া নাজিরহাট, বৈলতলী ইউনুচ মার্কেট, লাইল্যার দোকান, বরমার ধামাইরহাট, বরমা কলেজ গেইট, সাতঘাটিয়া পুকুর, বরকল মৌলভী বাজার, শান্তিরহাট, ফকিরার টেক, সিকদার বাড়ী রাস্তার মাথা, পূর্ব জোয়ারা চৌধুরী মার্কেট, হারলা নয়াহাট, মহাজনঘাটা, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানারের ছেঁয়ে গেছে। এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া, মোটর সাইকেল, আনারস প্রতীকের ব্যানার-পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। অপরদিকে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থীর বৈদ্যুতিক বাল্ব, তালা প্রতীক ও উড়ো জাহাজ প্রার্থীর পোষ্টার-ব্যানারও সর্বত্র দেখা গেছে।
এবারের নির্বাচনে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে খালেদা আকতার চৌধুরী একক প্রার্থী হওয়ায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।