চন্দনাইশে নির্মাণ হচ্ছে সর্বোচ্চ নাগরাজবেষ্টিত বুদ্ধমূর্তি

5

চন্দনাইশ প্রতিনিধি

প্রকৃতির অপরূপ প্রকৃতির মাঝে চন্দনাইশের পূর্ব জোয়ারাতে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ৮০ ফুট উচ্চ বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে এলাকাটি।
দৃষ্টিনন্দন নাগরাজবেষ্টিত দক্ষিণ এশিয়ার সুউচ্চ বুদ্ধমূর্তি নির্মিত হচ্ছে চন্দনাইশ পূর্ব জোয়ারা সদ্ধর্ম বিদর্শন ভাবনা পরিবেন কেন্দ্রে। বুদ্ধমূর্তিটি দন্ডায়মান হবে দেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি হিসেবে। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর এ বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ কাজ শুরু করে এখনো চলমান রয়েছে। ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ডের ১০ জনের অধিক শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ার কাজ চলছে বিরামহীনভাবে। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, আরো কয়েকবছর লাগবে ৮০ফুট উচ্চতা সম্পন্ন নাগরাজবেষ্টিত বুদ্ধমূর্তির কাজ সম্পন্ন হতে। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিধান বড়–য়ার আর্থিক সহায়তায় সুউচ্চ নান্দনিক নাগরাজবেষ্টিত বুদ্ধমূর্তিটি তৈরি করতে দেড় কোটি টাকার অধিক ব্যয় হচ্ছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এ কেন্দ্রে গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন আঙ্গিকের গড়া ২৮টি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৪টি বুদ্ধমূর্তি বিভিন্ন ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন আকারে স্থাপন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ১৭০ ফুট লম্বা শোয়ানো অবস্থায় বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের অন্যতম ভিক্ষু মৈত্রী পাল থেরো। শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে চন্দনাইশ পৌরসভা সদরে পূর্ব জোয়ারা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ এ বুদ্ধমূর্তিটি স্বর্ণাভাব দন্ডায়মান মূর্তিটি পুরো এলাকাকে সৌন্দর্যমূর্তি করে তুলেছে।
২০০৩ সালে পূর্ব জোয়ারা গ্রামের উত্তর বিলে বৌদ্ধদের অন্যতম মেডিটেশন শিক্ষাকেন্দ্র সদ্ধর্ম বিদর্শন ভাবনা পরিবেন প্রতিষ্ঠিত হয়। হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে প্রতিষ্ঠানটি এখন বিশাল ভাবনা কেন্দ্রে পরিণতি হয়েছে। প্রতিবছর ৪ টির অধিক বিদর্শন ভাবনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ১০ দিনব্যাপী প্রতিটি ভাবনা কর্মশালায় ৫০-৬০ জন অংশ নেয়। এ ভাবনা কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ মিত্র জিনপাল মহাস্থবিরের ঐকান্তিক অনুপ্রেরণায় ও প্রচেষ্টায় ভক্ত পরিবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় ৪ একর জমির উপর ভাবনা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। জিনপাল মহাস্থবির মিয়ানমার, থাইল্যান্ডে ধ্যানমগ্ন তথা মেডিটেশনের শিক্ষা লাভ করে শিক্ষার্থীদের দীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। দায়ক-দায়িকা ও দাতাদের অর্থায়নে এ কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন তিনটি ভোজনশালা। তাছাড়া একটি ধর্মদেশনা কেন্দ্রে গৌতম বুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন চার ধরনের মূর্তি রয়েছে এখানে। পাশাপাশি আরো দুইটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে। কেন্দ্রটি গৌতম বুদ্ধের বেশকিছু স্মৃতি বিজড়িত ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন। বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করার পাশাপাশি শৈল্পিক কারুকার্য করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। বুদ্ধবিহারের সামনে একটি ফুল বাগান, কেন্দ্রের চারপাশে ফুল আর ফল গাছে ভরে আছে। সন্ধ্যা নামলে ফুলের গন্ধে এলাকাটিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বিরাজ করে। সে সাথে রংবেরংয়ের বৈদ্যুতিক ঝিলিক বাতিতে পুলকিত হয়ে উঠে মন। জিনপাল মহাস্থবির সেখানে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী একের পর এক তৈরি করে যাচ্ছেন বিভিন্ন কারুকার্যের বুদ্ধ স্থাপনা।
তাছাড়া বসার জন্য করা হয়েছে বেশ কিছু ছোট ছোট ছাতার ঘর। সেখানে চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মেডিটেশন শিক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে।
মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের নির্মাণশৈলীর আদলে এদেশে বহুসংখ্যক বৌদ্ধবিহার ও মূর্তি নির্মাণ করা শিল্পীরা নাগরাজবেষ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ কাজ করছেন। এটি শুধু পুণ্য লাভের স্থানই হবে না, সেই সাথে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
একদিকে পূণ্য লাভ অন্যদিকে চন্দনাইশের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে স্বপ্ন থেকে এ বাস্তবায়ন বলে জানিয়েছেন, ভাবনা কেন্দ্রের অন্যতম কল্যাণ মিত্র জিনপাল মাহস্থবির।