চন্দনাইশে দুই শতাধিক হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত

5

মো. শাহাদাত হোসেন, চন্দনাইশ

চন্দনাইশে লবণাক্ত পানির কারণে ২’শ হেক্টরের অধিক জমির আউশ ধান জ্বলে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। পানির অভাবে চলতি মৌসুমে ১’শ হেক্টরের অধিক জমিতে আউশ চাষাবাদ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চন্দনাইশে পানি সংকটের পাশাপাশি নদীর পানিতে লবণাক্ততার কারণে জনজীবনে নানামুখী দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এলাকার বহু টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির প্রবল অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে পানি সংকটের কারণে ১’শ হেক্টরের অধিক জমিতে আউশ ধান রোপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। পানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার নামে খ্যাত দোহাজারী শঙ্খ নদীর তীরবর্তী এলাকার চাষাবাদ করা বরবটি, ঝিঙ্গা, চিছিঙ্গা, ঢেড়শ, কাঁকরোলসহ গ্রীষ্মকালীন নানা জাতের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে হতাশায় রয়েছে কৃষকেরা। এদিকে চন্দনাইশ পৌরসভার মগবিল, আড়ালিয়া, সুচিয়া, কাতবিল ও হারলা বিলের ২’শ হেক্টরের অধিক জমির আউশ ধান লবণাক্ত পানির কারণে জ¦লে গিয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে চন্দনাইশ পৌরসভার স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানি সংকট ও পানিতে লবণাক্ততার কথা জানা গেছে। পৌরসভার কৃষক মো. ফোরকান, মুন্সি মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমে তীব্র গরম, অনাবৃষ্টি, খরার কারণে পানি সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। শতাধিক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়নি। চলতি মৌসুমে যেসব জমিতে আউশ ধান রোপণ করা হয়েছে তৎমধ্যে চন্দনাইশ পৌরসভার মগবিল, আড়ালিয়া, সুচিয়া, কাতবিল ও হারলা বিলের ২’শ হেক্টরের অধিক জমির আউশ ধান লবণাক্ত পানির কারণে জ¦লে গিয়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। পূর্ব জোয়ারার কৃষক নুরুজ্জামান বলেছেন, প্রতি কানি (৪০ শতক) জমিতে চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তিনি ১৬ কানি জমিতে চাষাবাদ করে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। স্কীম ম্যানেজার মোজাম্মেল হক বাবুল ও জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, গত মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ না হওয়ায় কৃষকেরা অনেকে এ পেশা থেকে সরে পড়েছে। যারা ঝুঁকি নিয়ে চলতি মৌসুমে আউশ ধান রোপন করেছেন, পুনরায় লবণাক্ত পানির কারণে ফসল উৎপাদন না হওয়ায় অনেকে ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া প্রতি কানি জমির সেচ খরচ ৯’শ হাজার টাকা নির্ধারণ হলেও ফসল উৎপাদন না হওয়ায় সেচের টাকা পাবে স্কীম ম্যানেজার। ফলে বিপাকে পড়েছে স্কীম ম্যানেজারেরা। জাহিদুল ইসলামের স্কীমে শতাধিক কানি জমির চাষাবাদ হয়েছে। ফসল না হওয়ায় কৃষকেরা জমির সেচ খরচ দিবে না। ফলে জাহিদের ২০-২৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল, আনুষাঙ্গিক খরচসহ ১ লক্ষ ৮০ হাজারের অধিক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ৮ কানি জমিতে চাষাবাদ করে ফসল না হওয়া লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। একইভাবে স্কীম ম্যানেজার মোজাম্মেল হক বাবুলেরও প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান। এসব এলাকার ৪ জন স্কীম ম্যানেজার একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষক এবং স্থানীয় সচেতন মহল ও স্কীম ম্যানেজারের জন্য ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আউশ ধান কেঁটে ঘরে তোলার কাজ চলছে। সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় ফলন ভালো হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। ধান কাটার মৌসুমে কৃষকেরা কাল বৈশাখীর কবলে পড়ার আতংকে রয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেছেন, তীব্র গরম ও খরার কারণে পানি সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে। গত মৌসুমেও একই অবস্থার কারণে আউশের ফলন ব্যাহত হওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এ সব এলাকায় প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। তাই সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প)’র ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে স্কীম ম্যানেজারদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ এ পরামর্শ মোতাবেক কাজ করে নাই। সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প) স্থাপন করলে ৩ মৌসুমে অবাধে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প) স্থাপনের জন্য ২ লক্ষ টাকা অধিক ব্যয় হবে বিধায় এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল প্রশসানের উদ্যোগে চাষাবাদের লক্ষ্যে সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প) স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৪’শ ৫৩ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রায় ৩ হাজার ৪’শ ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তাছাড়া নদীর পানিতে লবণাক্ততার কারণে প্রায় ১’শ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।