চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন নয় নিয়মিত ট্রেন চাই

8

যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে কক্সবাজার রেল লাইন উদ্বোধন করেছিলেন, সেইদিন স্বপ্ন ছুঁয়ার মত উচ্ছ্বাস ছিল চট্টগ্রামবাসীর। আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাজারো চট্টগ্রামবাসী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে ছুটে গিয়েছিল কক্সবাজারে। তারও আগে দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণে হাজার একর জমি ছেড়ে দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষ। যদিও তার বিনিময় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু গরিব-কৃষকরা তাদের ফসলি জমি অন্যকে ছেড়ে দেয়ার মধ্যেই বড় কষ্ট ও ত্যাগ নিহিত। সেই কষ্টের জায়গায় রেল লাইন নির্মাণ হল। সবুজ-লাল রঙের ট্রেনও ছুটে যাচ্ছে সমুদ্রনগরীতে। কিন্তু সেই ট্রেনে চট্টগ্রামবাসী ভ্রমণ করতে পারবে না, তা ভাবতেই হাজারো নিঃশ্বাস একসাথে মাটিতে গড়াই। আশা করা হয়েছিল, কক্সবাজারগামী প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু তা হলো না, ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল শুরু হল। পরবর্তীতে চট্টগ্রামবাসীর দাবি ও চাহিদা বিবেচনায় এনে রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন চালু করে। ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে এ বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। তবে কতদিন এ ট্রেন চলবে তা উল্লেখ করা হয়নি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী এ বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ করার বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে বিরোপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা মন্তব্য ট্রল হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাস সিন্ডিকেটের কাছে হার মেনে রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় মোটেই আমলে নিচ্ছে না। তাদের যুক্তি ইঞ্জিন, লোকোমাস্টার ও জনবল সংকটের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ট্রেন বন্ধের বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে তা কার্যকর শুরু হয়। আমরা জানি, গত ৮ এপ্রিল ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ঈদে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় এবং যাত্রীদের চাপ থাকায় দুইদফা বিশেষ ট্রেনের সময় বাড়ানো হয়। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচলের সিদ্ধান্ত ছিল রেল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এই রুটের যাত্রীরা। ঈদুল আজহার আগে এই রুটের বিশেষ ট্রেন বন্ধ করা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে কক্সবাজারমুখী যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের যাত্রীরা বলেন, বিশেষ ট্রেন বন্ধ হবে সেটি আগেই জানতাম আমরা। তবে এতদিন যখন চালু ছিল ঈদুল আজহা পর্যন্ত চলাচল করলে যাত্রীরা সুবিধা পেতো, সড়ক পথের দুর্ভোগ থেকে বাঁচত। তাদের যুক্তি এই ট্রেনে কোনো সময় সিট খালি যায়নি। যাত্রীদের চাহিদা থাকার পরেও ট্রেন বন্ধ করা উচিত হয়নি। এখন বুঝতে পারছি কেন লোকসানে থাকে রেলওয়ে। উল্লেখ্য যে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার কথা জানানো হয়েছে। এ জন্য কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন বুধবার পর্যন্ত চলবে। ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বাতিল করা হলো। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ছাড়ে। কক্সবাজারে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়। গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বে স্থল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ট্রেনকে নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে মনে করেন সাধারণ মানুষ। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হয়ে উঠে এতদঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগের প্রধান স্টেশন। এখান থেকে কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেন যোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতার পরও এ ট্রেন যোগাযোগ দেশের মানুষের প্রধান বাহন ছিল। কিন্তু নব্বই দশকে এসে তা ক্রমান্বয়ে সংকোচিত হয়ে উঠে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর উন্নয়নশীর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ট্রেন যোগাযোগ আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমলাতান্ত্রিকতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সরকারের সদিচ্ছা ও জনগণের আকাক্সক্ষা কোনটিই পূর্ণ হয় না। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রেল যোগাযেগেও এর আঁচড় রেগেছে বলে আমাদের ধারণা। আমরা আশা করি, রেল কর্তৃপক্ষ বিমেষ ট্রেনটি বন্ধ করার বিষয়ে আবারও বিবেচনা করবেন। একই সাথে বিশেষ ট্রেন না দিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নেবে এমনটি প্রত্যাশা চট্টগ্রামবাসীর।