চট্টগ্রামে রকিব-হুদা-আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ ও প্রতারণামূলক নির্বাচনের আয়োজন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল হকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদকে। ওই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দায়িত্বে থাকা চার কমিশনারকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সিইসি কে এম নুরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আইয়ালসহ কমিশনের সচিব ও অন্য কমিশারদের আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে গত তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলায় আরো আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে থাকা সংসদ সদস্যদের। একই সঙ্গে এসব নির্বাচনে সংসদ সদস্য যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারাও অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করায় তাদেরও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলসহ অনেক জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ ছিল না। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। যারা কমিশনে ছিলেন তাদের ব্যর্থতার কারণে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাচনী মাঠে একপেশে আচরণ করেছে। বিপুল টাকা ব্যয়ে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তাতে সংবিধানের খেলাপ করেছেন কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসব কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও প্রতারণা মামলা করা হয়েছে।
তিনি জানান, ভুয়া নির্বাচন আয়োজনের ঘটনায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। আদালত সিএমপি কমিশনারকে একজন সহকারী কমিশনারের নিচে নয় এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে মামলার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী মো. একরামুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনাররা, নির্বাচন কমিশনের সচিবের বিরুদ্ধে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। তিনটা নির্বাচনে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারি নাই।
যারা সেই সময় নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তারা রাষ্ট্রের শপথ ভঙ্গ করেছেন। সামনের সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে যারা আতীতে অপরাধ করেছে তাদের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচার করা হোক। এ ছাড়া যারা এই নির্বাচনে সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, সেসব বেতন-ভাতা-ঘরবাড়ি ফেরত দেওয়ার জন্য মামলায় অনুরোধ করেছি।
যেহেতু এটা সাংবিধানিক বিষয় তাই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। এখন পুলিশ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভুয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও সংবিধান রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ ভঙ্গ করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ভুয়া সংসদ সদস্য ঘোষণার ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সক্রিয় ভূমিকা ও অংশগ্রহণ ছিল। ভুয়া নির্বাচন আয়োজন ও অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সংসদ সদস্য ঘোষণার কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদসহ সমস্ত সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও প্রত্যয় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সংসদ সদস্যদের ব্যঙ্গ করে ক্ষুব্ধ জনগণ ২০১৪ সালের সংসদ সদস্যদের বিকাশ এমপি, ২০১৮ সালের সংসদ সদস্যদের নিশিরাতের এমপি ও ২০২৪ সালের সংসদ সদস্যদের আমি-ডামির এমপি বলে হেয় করতেন। একের পর এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অনির্বাচিত লোকদেরকে ভুয়া জাতীয় সংসদ সদস্য ঘোষণা করে সংসদ ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বিলীন করে দেয়া হয়েছে।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও পরিকল্পনায় বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকারসহ সব অধিকার হরণ করে একের পর এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অনির্বাচিত লোকদের ভুয়া জাতীয় সংসদ সদস্য ঘোষণা করে। সংসদ ও নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও প্রত্যয় নষ্ট করে সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোনো নির্বাচন না হওয়া সত্তে¡ও নিজেদের সংসদ সদস্য পরিচিয় দিয়ে সংবিধানের আর্টিকল ৭ক বরে (১)(খ) ও (২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
একই সঙ্গে এসব নির্বাচনে সংসদ সদস্য যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারাও অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করায় তাদেরও এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।