চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিল, উত্তেজনা

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে মিছিল শুরু করে নিউ মার্কেট, টাইগার পাস, ওয়াসা মোড় হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার সড়কে মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে ছাত্র, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলন ঘিরে আন্দরকিল্লা মোড়সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। আন্দরকিল্লা মোড়ে পুলিশের সামনে গিয়ে অনেকে কটূক্তি করে ‘ভুয়া-ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়। তবে পুলিশ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে নীরব ভূমিকা পালন করে।
গতকাল শুক্রবার ৫ ঘণ্টা ধরে মিছিলরত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা নগরীর ওয়াসা মোড়ে একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পুলিশের এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার) বা সাঁজোয়া যানে ঢিল ছুড়েন। একই এলাকায় এ সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা বাগমনিরাম গলির দিকে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান নিয়ে সমাপ্তি ঘটে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আন্দোলনরত মিছিলকারীরা আমাদের জিইসি, ওয়াসা, পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে হামলা করে নামফলক ভেঙে ফেলে। তারা একটি সাঁজোয়া যানেও হামলা করে। পাশাপাশি আমাদের এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান) এর শাকিব নামে এক কনস্টেবল আহত হয়েছেন। এসব নিয়ে আমাদের আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের ফটক থেকে শুরু হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা আগে মসজিদে এসে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজে খতিব নির্যাতন-নিপীড়নকারীদের ওপর বদদোয়া করলে শিক্ষার্থীরা উচ্চস্বরে আমিন বলেন। নামাজ শেষেই শিক্ষার্থীরা বের হন। প্রথমে শিক্ষার্থীদের পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে শিক্ষার্থীরা ¯েøাগান দিয়ে মিছিল শুরু করে দেয়। প্রথমে মিছিলটি কোতোয়ালী হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় শিক্ষার্থীদের ¯েøাগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এরপর মিছিলটি টাইগারপাস এলাকা দিয়ে ওয়াসা মোড়ে পৌঁছে। সেখান পুলিশ থাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। তবে শেষপর্যন্ত সংঘর্ষ হয়নি। পরে পুলিশের সাঁজোয়া যানে ঢিল ছুড়ে শিক্ষার্থীরা। তখন ধাওয়া খেয়ে কিছুটা দূরে সরে গেলে শিক্ষার্থীরা ওয়াসা মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। ওইসময় পাশে ছাত্রলীগ অবস্থান করছিল। শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা পার্শ্ববর্তী বাগমনিরাম গলির ভেতরে পালিয়ে যায়।
এরপর মিছিলটি জিইসি মোড়ের দিকে এগোতে থাকে। ওয়াসা মোড় থেকে কয়েকশো গজ দূরে সড়কের পাশেই অবস্থিত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয় এবং পুলিশ লাইন। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীদেরই একটি পক্ষের বাধায় সেখানে ঢুকেনি তারা। এরপর মিছিলটি জিইসি, ২ নম্বর গেট, ষোলশহর রেলস্টেশন, মুরাদপুর ও শুলকবহর হয়ে বহদ্দারহাটে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে কর্মসূচি শেষ করে।
আবিদ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সরকার আমাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। রাতে বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ছাত্র থাকলে গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু তারা বলেছিল কোনো প্রকার হয়রানি করবে না। এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তার, শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া-কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব প্রার্থনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্রজনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইনজীবী, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, আলেম-ওলামা, শ্রমিক, অভিভাবকসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি যে, শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করে তুলুন।’