চট্টগ্রামের ৬ হাজার প্রার্থীর অপেক্ষা বাড়লো

19

আসহাব আরমান

তৃতীয় ধাপের চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। জেলায় ৭২০টি শূন্য পদের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষা অংশ নিয়েছেন ৫ হাজার ৯২০ জন প্রার্থী। গত ১৫ মে থেকে শুরু হওয়া মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ১২ জুন। তবে এসব চাকরীপ্রার্থীর অপেক্ষা আরও বাড়লো। গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মৌখিক পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে এসে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় হতাশ এসব পরীক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, নগরী ও উপজেলায় ২১টি শিক্ষা থানায় শূন্য পদ রয়েছে ৭২০টি। তবে প্রতিদিনই নতুন করে শূন্য পদ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে পাঁচলাইশ থানায় শূন্য পদের সংখ্যা ১১টি, পাহাড়তলীতে ১৯টি, বন্দরে ১১টি, চান্দগাঁয়ে ২৩টি, ডবলমুরিং এ ১৬টি এবং কোতোয়ালী থানা এলাকায় ৪টি রয়েছে। এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলায় ৩১টি, সাতকানিয়ায় ৩২টি, সন্দ্বীপে ৪২টি, ফটিকছড়িতে ৫০টি, মিরসরাইয়ে ৭৪টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৮৮টি, সীতাকুন্ডে ২৮টি, চন্দনাইশে ৩৩টি, পটিয়ায় ৬১টি, আনোয়ারায় ২২টি, বোয়ালখালীতে ৩৯টি, রাউজানে ৫৩টি, বাঁশখালীতে ৩০টি, হাটহাজারীতে ৫০টি এবং কর্ণফুলী উপজেলায় ৩টি শূন্য পদ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে সদ্য পাস করে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন নাসরীন আক্তার। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইতোমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করেছেন। নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকলে ফলাফল প্রকাশের পরই তা বাতিল করে দিত। তাহলে আমার এত কষ্ট করতে হতো না। মৌখিক পরীক্ষার জন্য কাগজপত্র যোগাড় করতে আমার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কাগজগুলো সত্যায়িত করার জন্য বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তার পেছনে দৌড়াতে হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে দিলে আমার এত কষ্ট লাগতো না।’
আরেক পরীক্ষার্থী আব্দুস সামাদ রিফাত পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি প্রশ্ন ফাঁসকারীদের শাস্তি চাই। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। হাইকোর্টের রায়কে আমি স্বাগত জানাই। এটা আমার প্রথম সরকারি চাকরির পরীক্ষা, কোনো অনৈতিক উপায়ে চাকরি হোক এটা আমি চাই না। যদিও প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে আমি জানতাম না।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১৫ মে থেকে। আগামী ১২ জুন পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে এখনও অফিশিয়াল কোনো চিঠি পাইনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’
প্রসঙ্গত, তৃতীয় ধাপে গত ২৯ মার্চ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষায় চট্টগ্রামের পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪৯ হাজার ১১৪ জন। এদের মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৫ হাজার ৯২০ জন। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ঘটনার তদন্ত ও পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন পরীক্ষার্থী। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।